Friday, 10 August 2018

নারীর পর্দা

এফ কে জুনেদ আহমদ

এফ কে জুনেদ আহমদ

পর্দা হল নারীর ভূষণ। পর্দা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কুরআন মজীদের কয়েকটি সূরায় পর্দা-সংক্রান্ত বিধান দেওয়া হয়েছে।
পর্দার বিষয়ে আল্লাহ তাআলা সকল শ্রেণীর ঈমানদার নারী-পুরুষকে সম্বোধন করেছেন। আল্লাহ পাক নবী (সা.) কে আদেশ করেছেন তিনি যেন তাঁর স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে এবং মুমিনদের নারীদেরকে চাদর দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত রাখার আদেশ দেন।
কিছু আয়াতে উম্মুল মুমিনীনদেরকেও সম্বোধন করা হয়েছে, কোনো কোনো আয়াতে সাহাবায়ে কেরামকেও সম্বোধন করা হয়েছে। মোদ্দকথা, কুরআন মজিদ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মুসলিম নার নারীর জন্য পর্দার বিধান দান করেছে। এটি শরীয়তের একটি ফরয বিধান। এ বিধানের প্রতি সমর্পিত থাকা ঈমানের দাবি । ইসলামে নারীকে যত কিছু দিয়ে সম্মানিত করেছে তার মধ্যে অন্যতম হল পর্দা। পর্দা নারীর সম্মান এবং মর্যাদার প্রতীক।
নারীর শালিনতা এবং ভদ্র হওয়ার প্রতীক হল তার পরিধানে বোরকা থাকা। বোরকা মানে নারীকে কালো কাপড়ে ঢেকে ফেলা বা বন্দি করা নয়, বরং নারীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, তার ইজ্জত আব্রুকে সম্মানজনকভাবে সংরক্ষণ করা। পোশাক-পরি”ছদ মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, পোশাক যেমন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঢেকে রাখা ও সৌন্দর্যের উপকরণ, তেমনি শরীয়তের দিক-নির্দেশনা মেনে তা ব্যবহার আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-   
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
অর্থাৎ, হে নবী! আপনি আপনার পতœীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়।
এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। ( সুরা আহযাব ৫৯)
পর্দা শব্দটি ফার্সি।অধিক ব্যবহারের জন্য বর্তমানে এটি বাংলা শব্দের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। এর আরবি শব্দ হল হিজাব। হিজাব শব্দটি বিপুল পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। হিজাব অর্থ ঢেকে রাখা, আবৃত করা, আড়ালে রাখা।  হিজাব শব্দটি কোরআনে সাত বার এসেছে, এর মধ্যে ৫ বার হিজাব এবং ২ বার হিজাবান দেখুন সুরা: আয়াত( হিজাব অর্থ) ৭:৪৬ (প্রাচীর ), ১৭:৪৫(প্রচ্ছন্ন পর্দা ), ১৯:১৭ (নিজেকে আড়াল করার জন্যে সে পর্দা করলো), ৩৩:৫৩ (পর্দার আড়াল থেকে চাইবে), ৩৮:৩২ (সূর্য ডুবে গেছে সূর্য আড়ালে গেছে), ৪১:৫ (আমাদের ও আপনার মাঝখানে আছে অন্তরাল), ৪২:৫১ (কিন্তু ওহীর মাধ্যমে অথবা পর্দার অন্তরাল থেকে)                     
পারিভাষিক অর্থে হিজাব হলো বিবাহ বৈধ এমন পুরুষদের দৃষ্টি থেকে আড়াল রাখা। পুরুষদের ক্ষেত্রে নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত । নারীদের ক্ষেত্রে মুখম-ল, হাতের কব্জি এবং পায়ের কব্জি বাদে বাকি পুরো শরীর রাখাটাই হল পর্দা। মুহরিম নয় এমন পুরুষদের দৃষ্টি থেকে মুসলিম মহিলাদের আড়াল করার নামই পর্দা। এর চেয়েও বড় মিথ্যা আর কি হতে পারে। যারা বলে পর্দা বিদ্যা অর্জনের অন্তরায়, তাদের উদ্দেশ্যে বলি পর্দায় থেকে মা আয়শা (রা.) পান্ডিত্য অর্জন করেছিলেন। নবী করিম (সা.) আয়শা (রা.) কে কেন্দ্র করে বলেছিলেন (ইসলামের তিন ভাগের এক ভাগ) আয়শা (রা.) এর কাছে আমানত আছে। এছাড়া আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ওবামার উপদেষ্টা ড. ডালিয়া মুজাহিদ শালীন পোশাক পরিধান করার কারণে সাংবাদিকগণ তাকে গভীর বিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করেছিলো, আপনার বেশ-ভূষা ও পোশাক- পরি”ছদের মধ্যে আপনার উচ্চ  শিক্ষা ও জ্ঞানের গভীরতা প্রকাশ পা”েছনা। তাদের ধারণা ছিলো, হিজাব অনগ্রসরতা, মূর্খতা ও সেকেলে ধ্যান-ধারণার প্রতীক। উত্তরে তিনি বললেন, আদিম যুগে মানুষ ছিল প্রায় নগ্ন। শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার উন্নতির সাথে সাথে পোশাক পরিধান করে সভ্যতার উচ্চ শিখরে আরোহণ করতে থাকে। আমি যে পোশাক পরিধান করেছি, তা শিক্ষা ও চিন্তাশীলতায় উন্নতি ও সভ্যতার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। নগ্নতা ও উলঙ্গতাই যদি উন্নত শিক্ষা ও সভ্যতার চিহ্ন হতো, তাহলে বনের পশুরাই হতো পৃথিবীর সবচেয়ে সুসভ্য ও সুশিক্ষিত।
সৌদি আরব, প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অসংখ্য দেশের নারীরা পর্দা করে হিজাব পরিধান করে। হাত মোজা, পা মোজা পরিধান করে বিদ্যালয়গুলোতে যাচ্ছে এবং বড় মাপের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক হচ্ছেন। জাতি গঠনের জন্য তো এমন সুশিক্ষিত মা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। নেপোলিয়ান বোনাপাঠ বলেছেন- Give me an educated mother, I will give you a educated nation.
“তুমি আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব”
আদর্শ মা বলতে বেপর্দা নষ্ট মেয়েটিকে বোঝানো হয় না। একজন নারীকে বুঝানো হয়েছে, যে সার্বিকভাবে তার স্বতীত্বকে রক্ষা করে ধর্মীয় বিধি-বিধান মান্য করে জীবনকে আল্লাহর পথে উৎসর্গিত করবে। 
পরিশেষে, আমাদের মনে রাখতে হবে, নারীদের যেমন পর্দা করা ফরয তেমনি তাদেরকে পর্দামত চলতে সুযোগ দেয়া পুরুষদের উপর ফরয। আর যে সব পুরুষরা নারীদের অভিভাবক তাদের জন্য ফরয হল নারীদের পর্দায় রাখা।
 

Sunday, 1 July 2018

জামাতের সাথে নামাজের গুরুত্ব

এফ কে জুনেদ আহমদ

এফ. কে. জুনেদ আহমদ
 নামাজ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। আল্লাহ তায়ালা বান্দার উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন এবং  এ নির্ধারিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবের সঙ্গে জামাতে আদায় করার ব্যাপারে তনি  তাগিদ দিয়েছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর কালামে পাকে ইরশাদ করেন- তোমরা নামাজ পড় নামাজিদের সাথে অর্থাৎ তোমরা জামাতের সাথে নামাজ পড় (সূরা বাকারা) একা একা পড়ো না  নবীকরিম (সা) ইরশাদ করেন জামাতের সাথে নামাজে সতাশ গুন বেশি সোওয়াব। তিনি আরও ইরশাদ করেন- একা একা নামাজ পড়া অপেক্ষা দু-জন জামাতে নামাজ পড়া উত্তম। দু-জন অপেক্ষা বহুজন নামাজ পড়া আল্লাহর কাছে আরো বেশি উত্তম। (আবু দাউদ)  যে ব্যাক্তি এশার নামাজ জামাতে পড়ল সে অর্ধ রাত ইবাদত করার সওয়াব পাবে, যে ব্যক্তি এশার এবং ফজর জামাতের সাথে পড়লো সে পূর্নরাত বন্দেগীর সওয়াব পেল। মসজিদে ইমামের সাথে জামাতে নামাজ আদায়ের মধ্যে রয়েছে মানুষের জন্য কল্যান ও হিকমত। রাসুল (সা) কখনো জামাত তরক করতেন না, অসুস্থ অবস্থায় যখন হাটতে পারতেন না তখন দু সাহাবীর কাধে ভর করে পা টেনে টেনে জামাতে হাজির হতেন। রাসুল (সা)  বলেন তোমরা আজান শুনামাত্র মসজিদে গিয়ে সামনের কাতারে হাজির হও, কেননা ১ম কাতার ২য় কাতার  অপেক্ষা উত্তম, ২য় কাতার ৩য় কাতার অপেক্ষা উত্তম এভাবে একবারে শেষ কাতার অপেক্ষা তার সামনের কাতার উত্তম। পরিশেষে, জামাতে নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুল (সা) এর ছোট্র একটি  হাদিস দিয়ে শেষ করতে চাই জামাতে নামজ সম্পর্কে বিশ্ব নবী (সা) বলেন নামাজের আজান হওয়ার পরও যারা ঘরে থেকে মসজিদে নামাজের জামাতে উপস্থিত হয়না যদি সে সব ঘরে নারী এবং শিশুরা না থাকত তবে সে সব ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিতাম। আল্লাহ পাক যেন মুসলিম উম্মাহকে যথা সময়ে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করেন।
আমিন।

শিক্ষার্থী: হযরত শাহজালাল ডি. ওয়াই. কামিল মাদরাসা, সোবহানীঘাট, সিলেট।

Monday, 30 October 2017

আজ ও খুুঁজি তাকে

এফ. কে. জুনেদ আহমদ

এফ কে জুনেদ আহমদ 
হযরত শাহজালাল শাহপরান ও ফুলতলী (রহ.) সহ ৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত আধ্যাত্মিক রাজধানী, খ্যাতপূর্ণ ভূমি সিলেটের জীবন্ত কিংবদন্তী কুরআন তথা দ্বীনের খাদেমদের মধ্যে অন্যতম হলেন অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান কামালী। ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কুরআনের সুমহান বাণী প্রচার করে তিনি বেঁচে আছেন কোটি জনতার মাঝে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে। ক্ষণজন্মা এই মনীষী ছিলেন সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলাধীন আঙ্গারজুর গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বেড়ে উঠা এই মনীষী তার কর্মজীবনের ন্যায় নিষ্ঠা ও সততার সাথে দেশ ও জাতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আনজুুমানে আল ইসলাহ ও লতিফিয়া ক্বারী সোসাইটি গোয়াইনঘাট উপজেলার সভাপতি এবং আঙ্গারজুর আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে গুরু দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও আঙ্গারজুর পূর্ব পাড়া জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লীসহ অন্যান্য দায়িত্বরত অবস্থায় মাওলায়ে হাকীকীর ডাকে সাড়া দেন। হুজুর শুধু ছাত্রদের মাঝে কুরআনের বাণী ছড়িয়ে দিতে কাজ করেননি বরং কাজ করেছেন কুরআনিক সমাজ বিনির্মাণে। আমার শ্রদ্ধেয় ওয়ালিদ মুহতরামের নির্দেশে ২০১১ সালে যখন আমি দাখিল ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই তখন হুজুরের সাথে প্রথম দেখা। মাদরাসায় ভর্তি করার পর হুজুরের নির্দেশে আমার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন তার ফুফাতো ভাই ও বর্তমান মেম্বার জনাব নিজাম উদ্দিন সাহেবের বাড়িতে। হুজুরের বাড়ি মসজিদ সংলগ্ন হওয়ার সুবাদে প্রায়ই হুজুরের সঙ্গে দেখা হত। দেখা হলে জানতে চাইতেন থাকা খাওয়া ও পড়া- লেখার কোন সমস্যা হচ্ছে কি না? বা ব্যক্তিগত কোন অসুবিধা আছে কি না। তখন আমার বয়স কম থাকায় আমি বেশি বুঝতাম না, কিন্তু ধীরে ধীরে যখন আমার বুঝার বয়স হল তখন আমি মনে মনে ভাবতাম হুজুর শুধু তো মাদরাসার অধ্যক্ষ নন বরং তিনি আমার একজন সুযোগ্য অভিভাবকও ছিলেন। আমাকে তাঁর ছেলেদের মত স্নেহ করতেন। আমার সহপাঠীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে জানতে পারলাম যে, সকল ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে তিনি সমান আচরণ করতেন।
হুজুরের শিক্ষা বা কর্মজীবন সম্পর্কে আমার তেমন একটা জানা নেই। পাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জেনেছি যে, হুজুর ছিলেন সদর থানার অন্তর্গত সিরাজুল ইসলাম আলিম মাদরাসার শিক্ষক, আঙ্গারজুর দাখিল মাদরাসার সুপার পদ শুন্য হওয়ার সুবাদে এলাকাবাসীর অনুরোধে সুপার পদে তিনি যোগদান করেন। 
এ মহান ব্যক্তিত্বের প্রচেষ্টায় মাদরাসার দাখিল থেকে আলিম পর্যায়ে উন্নীত হয়। তার এই প্রচেষ্টা স্মরণীয় হয়ে থাকবে মানব হৃদয়ে। 
অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি তার সহকর্মীদের নিকট তিনি পরম শ্রদ্ধেয় ছিলেন। অনেক বৃদ্ধ হুজুরগণ তাকে হুজুর বলে সম্বোধন করতেন। মাদরাসার শিক্ষকবৃন্দ হুজুরের বিয়োগ ব্যথায় আজও ব্যথিত। হুজুরের মৃত্যু দিনে দেখলাম হাজার হাজার মানুষ, ছাত্র-শিক্ষকের কান্নার শুরগোল, যা দ্বারা বুঝা যায় যে, আমরা এক আপনজন কে হারিয়ে ফেলেছি। জনা যায় আগত মুসাল্লিদের অবস্থায় বুঝা গেল অধ্যক্ষ হুজুরের সুন্দর আচরণ থেকে আজ শুধু মাদরাসা নয় গোটা উত্তর সিলেটবাসী সুন্দর আচরণ থেকে বঞ্চিত।
অবুঝ মনে বলতে হয়, 
অবুঝ মনে বুঝ মানে না হুজুর তো আর নাইরে নাই।
মোদের ছেড়ে চলে গেছেন উত্তর সিলেটের হাতেম তায়ী।
কুরআনের এ জীবন্ত খাদেম ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর সোমবার বেলা ১.৪৫ মিনিটের সময় সিলেটবাসীকে কাদিয়ে পরপারে পাড়ি জমান। 
পরিশেষে অশান্ত মনকে শান্তনা দিচ্ছি যে, সবাইকে মুত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। সৃষ্টিকর্তার বিধান অনুযায়ী সবাইকে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। একমাত্র স্বীয় মহিমা ও উজ্জল কর্মই মানুষ মানুষের মাঝে জীবন্ত রাখে। কুরাআনের খাদিম ও কুরআনের আলোকে সমাজ বিনির্মাণে নিবেদিত এই প্রাণ প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আমাদের শিরতাজ, সর্ব শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মাওলানা মুজিবুর রহমান কামালী মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। আল্লাহ তায়ালার দরবারে তার মাগফিরাত কামনা করছি এবং আমাদের মুহতারাম হুজুর কে যেন জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন। আমীন।
লেখক : সাবেক ছাত্র-আঙ্গারজুর আলিম মাদরাসা
বর্তমান শিক্ষার্থীঃ হযরত শহাজালাল দারুচ্ছুন্নাহ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদরাসা,সোবহানীঘাট, সিলেট।

Saturday, 16 September 2017

মানবিক খাতিরে রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়ান

আলী আহমদ চৌধুরী

জন্ম থেকে আজ অবধি যত ধরণের ঘৃণা প্রকাশ করেছি তার থেকেও কোটি কোটিগুন ঘৃণা প্রকাশ করছি আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে খলফের যোগ্যতম উত্তরাধিকারইয়াহুদিদের একনিষ্ঠ বন্ধু ও খাদিমমুসলিম বিশ্বের যোগ্যতম অপ্রতিদ্বন্দ্বী শত্রু,   বিশ্বের বুকে মুনাফিকদের নেতৃত্বদানকারী একমাত্র দেশ সৌদী কতৃপক্ষের প্রতি।যে ভূখণ্ড থেকে ইসলামের যাত্রা শুরু,যেখান থেকে মানবতার মুক্তির মশাল প্রজ্বলিত হয়েছিলযে পবিত্র জমিনে আরাম করতেছেন বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম   শায়িত আছেন খোলাফায়ে রাশেদা সহ অসংখ্য সাহাবায়ে কিরাম(রা:), যারা একেকজন ছিলেন মানবতার মূর্ত প্রতিক।সে পবিত্র ভূখন্ডে বসবাস করে তাদের আত্মার সাথেবিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ(স:)এর সাথে ও তাঁর অসহায় উম্মতদের সাথে কিভাবে যে গাদ্দারী করে যাচ্ছে তা আজ বিশ্ববাসী অবলোকন করতেছে।আজ যদি সাহাবায়ে কিরামদের কোন একজন দুনিয়ায় থাকতেন তাহলে হয়তো সৌদ সরকারের গাদ্দারদের গর্দান উড়িয়ে দিতেন।কিন্তু সে সময় এখন আর নেই। যে সময়ে দুনিয়ার দিকেদিকে ইয়াহুদি-খ্রিষ্টানেরা মুসলিম মিল্লাতকে ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত,  শুধু ষড়যন্ত্রই নয় রাসূলে মাকবুল (স:) এর প্রাণপ্রিয় উম্মতদের খুন পিপাসায় মত্ত সে সময়ে সৌদ সরকারের অধিকাংশরাই নারী মদ নিয়ে মাতাল ও তাদের মনিব ইয়াহুদীদের খুশি করা নিয়ে মহাব্যস্ত। তাদের কারণেই ফিলিস্তিনের নিরপরাধ মুসলিম ভাই-বোনেরা ও শিশুরা আজ অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার। দয়াল নবীর অসহায় উম্মতেরা  শাহাদাতের কাফেলায় শরীক হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

বার্মার মুসলমানদের উপর বিশ্বের জঘন্যতম অত্যাচার যা আইয়্যামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। আমরা রুশ বিপ্লব দেখেছি, হিটালারের তাণ্ডবলীলা দেখেছি, ব্রিটিশ বেণিয়াদের অত্যাচার নিপীড়ন অবলোকন করেছি। কিন্তু তার চেয়েও জঘন্য ও অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে আমারই ভাই-বোন রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি। যা ইতিহাসের সকল যুলুম নির্যাতনকে হার মানিয়ে বর্বরতার নিকৃষ্টতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে শান্তি নামক অশান্তিতে নোবেলবিজয়ী,  ডাইনী, রাক্ষসী,  মুসলিম তথা মানবখেকো অং সাং সূচী নামক একটি পেত্নীর নেতৃত্বাধীন মায়ানমার সরকার। এমনি মহাসংকটের সময় অসহায় মুসলিমদের পাশে দু'একটি দেশ ব্যতীত মুসলিম বিশ্ব আজ নিরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে।
ধিক শত ধিক OIC সহ আন্তর্জাতিক মুসলিম সংস্থাগুলোর প্রতি যারা এত কিছু অবলোকন করার পরও ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদের পা চেটে যাচ্ছে।
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার কমিশন এরা তো সরাসরি মুসলিম নিধনে সম্পৃক্ত। তাই এদের কথা আর নাই বললাম।
এহেন পরিস্থিতিতে সর্বপ্রথম  মজলুম  মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল এই গাদ্দার মুনাফিক সৌদ সরকারের। কিন্তু অবস্থা ঠিক তার বিপরীত।  ধন্যবাদ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও তাঁর স্ত্রীকে। উম্মতে মুহাম্মদীর এই দুর্দিনে সাথী হওয়ার জন্য। বিশ্বমোড়লদের প্রতি এতটুকু আরজ মুসলিম হিসেবে নয়, অন্তত মানুষ হিসেবে তাদের পাশে দাড়ান। আর মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আবেদন আপনাদের যদি মুসলিমদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসা লজ্জাকর বা মানহানিকর মনে করেন তবে মুসলিম হিসেবে নয়, অসহায় জীব বা অসহায় মানুষ হিসেবে তাদের পাশে দাড়ান, তাদের পক্ষে কথা বলুন। সৌদ সরকারের স্বরণ রাখা উচিত যে, রোহিঙ্গাদের পূর্বসূরিরা একসময়কার সৌদি আরবের অধিবাসী ছিলেন।
রাসূল (স:) যেখানে সকল মুসলিমকে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছেন। সেখানে আজ মুসলিম বিশ্ব নির্বিকার।
সৌদ সরকার ট্রাম্পকে বিরাট অংকের রিয়াল খরচ করে উপহার দিতে পারল কিন্তু অসহায় মুসলিমদের জন্য একটি কানা কড়িও দিতে পারল না। ছিঃ সৌদ গাদ্দাররা! ছিঃ তোমাদের। কিভাবে রাসূলে মকবুল (স:) এর কাছে তার অসহায় উম্মতদের ব্যাপারে জবাব দিবে।
আজ কান পেতে শোন আমার অসহায় ভাই-বোনদের আর্তনাদ। তারা বলছে "আমরা তো মানুষ,  রাসূলে মকবুল (স:) এর প্রাণপ্রিয় উম্মত।  আজ যদি আমাদের কাণ্ডারি দয়াল নবী এই ধরাধামে থাকতেন তাহলে আমাদের এহেন অবস্থা দেখে ঘরে বসে থাকতেন না। কোথায় আবু বকর,উমর, উসমান, আলী আজ তোমাদের বড়ই প্রয়োজন মুসলিম মিল্লাতের।"
যারা মানবতার বুলি আওড়ায় আজ তারা কোথায়?
আমরা যদি এই হত্যাযজ্ঞকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাই যে, এমন কোন ধর্ম নেই যা জীব হত্যা সমর্থন করে। সকল ধর্মেই জীব হত্যা মহাপাপ।
আজ যে সকল বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদেরকে অকাতরে হত্যা করছে তাদের ধর্মে জীব হত্যা সম্পর্কে বলা হয়েছে- 
“ সকলেই দণ্ডকে ভয় করে,জীবন সকলের প্রিয়।সুতরাং নিজের সাথে তুলনা করে কাউকেও প্রহার করবে না কিংবা আঘাত করবে না ”
সূত্রনিপাত গ্রন্থের মৈত্রীসূত্রে এ বিষয়টি বিবৃত হয়েছে এভাবে : ‘সভয় অথবা নির্ভয়, হ্রস্ব অথবা দীর্ঘ, বৃহৎ অথবা মধ্যম, ক্ষুদ্র অথবা স্থূল, দৃশ্য অথবা অদৃশ্য, দূরে অথবা নিকটে যেসব জীব জন্মগ্রহণ করেছে বা জন্মগ্রহণ করবে সেসব প্রাণী সুখী হউক’।
আর ইসলাম ধর্ম কখনো মানব হত্যা তো দূরে থাক সামান্যতম বিশৃঙ্খলাও সমর্থন করে না। পবিত্র কোরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ বলেনঃ-
مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ كَتَبْنَا عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنَّهُ مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا وَلَقَدْ جَاءَتْهُمْ رُسُلُنَا بِالْبَيِّنَاتِ ثُمَّ إِنَّ كَثِيرًا مِنْهُمْ بَعْدَ ذَلِكَ فِي الْأَرْضِ لَمُسْرِفُونَ
অর্থঃ “এ কারণেই আমি বনী ইসরাঈলের প্রতি এ নির্দেশ দিয়েছি যে, যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে হত্যা করলো অন্য প্রাণের বিনিময় ব্যতীত কিংবা তার দ্বারা ভূ-পৃষ্ঠে কোন ফাসাদ বিস্তার ব্যতীত, তবে সে যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করে ফেললো; আর যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে রক্ষা করলো সে যেন সমস্ত মানুষকে রক্ষা করলো” (সুরা মায়িদাহ, আয়াত-৩২)।
সুতরাং যারা ধর্মের অনুশাসন মানেন বা ধর্মাবলম্বী তাদের উচিত এসকল অসহায়দের প্রতি এগিয়ে আসা।
যারা ধর্মে বিশ্বাসী না তাদের জন্য ধর্মের কথা বাদই দিলাম অন্তত  মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। 
এতো অমানবিক  নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ দেখার পরও যারা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে তারা অধার্মিক ও অমানুষ। তারা ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম। আসুন আমরা সবাই অন্তত মানবিক খাতিরেই রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়াই। আমাদের দেশের সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংস্থাগুলোর  প্রতি অনুরোধ দলমত নির্বিশেষে ১৯৭১ সালে ভারতের পাশাপাশি যারা আমাদের সাহায্য করেছিল প্রতিবেশী হিসেবে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসুন। মুসলমান বাদ দেন মানুষ হিসেবে,  প্রতিবেশী হিসেবে, মুক্তিযুদ্ধের সাহায্যকারী হিসেবে অন্ততপক্ষে জীব হিসেবে তাদের পাশে দাড়ান। 

লেখকঃ আলী আহমদ চৌধুরী, অর্থনীতি বিভাগ,এম সি কলেজ, সিলেট।