Friday 10 August 2018

নারীর পর্দা

এফ কে জুনেদ আহমদ

এফ কে জুনেদ আহমদ

পর্দা হল নারীর ভূষণ। পর্দা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কুরআন মজীদের কয়েকটি সূরায় পর্দা-সংক্রান্ত বিধান দেওয়া হয়েছে।
পর্দার বিষয়ে আল্লাহ তাআলা সকল শ্রেণীর ঈমানদার নারী-পুরুষকে সম্বোধন করেছেন। আল্লাহ পাক নবী (সা.) কে আদেশ করেছেন তিনি যেন তাঁর স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে এবং মুমিনদের নারীদেরকে চাদর দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত রাখার আদেশ দেন।
কিছু আয়াতে উম্মুল মুমিনীনদেরকেও সম্বোধন করা হয়েছে, কোনো কোনো আয়াতে সাহাবায়ে কেরামকেও সম্বোধন করা হয়েছে। মোদ্দকথা, কুরআন মজিদ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মুসলিম নার নারীর জন্য পর্দার বিধান দান করেছে। এটি শরীয়তের একটি ফরয বিধান। এ বিধানের প্রতি সমর্পিত থাকা ঈমানের দাবি । ইসলামে নারীকে যত কিছু দিয়ে সম্মানিত করেছে তার মধ্যে অন্যতম হল পর্দা। পর্দা নারীর সম্মান এবং মর্যাদার প্রতীক।
নারীর শালিনতা এবং ভদ্র হওয়ার প্রতীক হল তার পরিধানে বোরকা থাকা। বোরকা মানে নারীকে কালো কাপড়ে ঢেকে ফেলা বা বন্দি করা নয়, বরং নারীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, তার ইজ্জত আব্রুকে সম্মানজনকভাবে সংরক্ষণ করা। পোশাক-পরি”ছদ মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, পোশাক যেমন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঢেকে রাখা ও সৌন্দর্যের উপকরণ, তেমনি শরীয়তের দিক-নির্দেশনা মেনে তা ব্যবহার আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-   
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
অর্থাৎ, হে নবী! আপনি আপনার পতœীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়।
এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। ( সুরা আহযাব ৫৯)
পর্দা শব্দটি ফার্সি।অধিক ব্যবহারের জন্য বর্তমানে এটি বাংলা শব্দের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। এর আরবি শব্দ হল হিজাব। হিজাব শব্দটি বিপুল পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। হিজাব অর্থ ঢেকে রাখা, আবৃত করা, আড়ালে রাখা।  হিজাব শব্দটি কোরআনে সাত বার এসেছে, এর মধ্যে ৫ বার হিজাব এবং ২ বার হিজাবান দেখুন সুরা: আয়াত( হিজাব অর্থ) ৭:৪৬ (প্রাচীর ), ১৭:৪৫(প্রচ্ছন্ন পর্দা ), ১৯:১৭ (নিজেকে আড়াল করার জন্যে সে পর্দা করলো), ৩৩:৫৩ (পর্দার আড়াল থেকে চাইবে), ৩৮:৩২ (সূর্য ডুবে গেছে সূর্য আড়ালে গেছে), ৪১:৫ (আমাদের ও আপনার মাঝখানে আছে অন্তরাল), ৪২:৫১ (কিন্তু ওহীর মাধ্যমে অথবা পর্দার অন্তরাল থেকে)                     
পারিভাষিক অর্থে হিজাব হলো বিবাহ বৈধ এমন পুরুষদের দৃষ্টি থেকে আড়াল রাখা। পুরুষদের ক্ষেত্রে নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত । নারীদের ক্ষেত্রে মুখম-ল, হাতের কব্জি এবং পায়ের কব্জি বাদে বাকি পুরো শরীর রাখাটাই হল পর্দা। মুহরিম নয় এমন পুরুষদের দৃষ্টি থেকে মুসলিম মহিলাদের আড়াল করার নামই পর্দা। এর চেয়েও বড় মিথ্যা আর কি হতে পারে। যারা বলে পর্দা বিদ্যা অর্জনের অন্তরায়, তাদের উদ্দেশ্যে বলি পর্দায় থেকে মা আয়শা (রা.) পান্ডিত্য অর্জন করেছিলেন। নবী করিম (সা.) আয়শা (রা.) কে কেন্দ্র করে বলেছিলেন (ইসলামের তিন ভাগের এক ভাগ) আয়শা (রা.) এর কাছে আমানত আছে। এছাড়া আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ওবামার উপদেষ্টা ড. ডালিয়া মুজাহিদ শালীন পোশাক পরিধান করার কারণে সাংবাদিকগণ তাকে গভীর বিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করেছিলো, আপনার বেশ-ভূষা ও পোশাক- পরি”ছদের মধ্যে আপনার উচ্চ  শিক্ষা ও জ্ঞানের গভীরতা প্রকাশ পা”েছনা। তাদের ধারণা ছিলো, হিজাব অনগ্রসরতা, মূর্খতা ও সেকেলে ধ্যান-ধারণার প্রতীক। উত্তরে তিনি বললেন, আদিম যুগে মানুষ ছিল প্রায় নগ্ন। শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার উন্নতির সাথে সাথে পোশাক পরিধান করে সভ্যতার উচ্চ শিখরে আরোহণ করতে থাকে। আমি যে পোশাক পরিধান করেছি, তা শিক্ষা ও চিন্তাশীলতায় উন্নতি ও সভ্যতার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। নগ্নতা ও উলঙ্গতাই যদি উন্নত শিক্ষা ও সভ্যতার চিহ্ন হতো, তাহলে বনের পশুরাই হতো পৃথিবীর সবচেয়ে সুসভ্য ও সুশিক্ষিত।
সৌদি আরব, প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অসংখ্য দেশের নারীরা পর্দা করে হিজাব পরিধান করে। হাত মোজা, পা মোজা পরিধান করে বিদ্যালয়গুলোতে যাচ্ছে এবং বড় মাপের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক হচ্ছেন। জাতি গঠনের জন্য তো এমন সুশিক্ষিত মা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। নেপোলিয়ান বোনাপাঠ বলেছেন- Give me an educated mother, I will give you a educated nation.
“তুমি আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব”
আদর্শ মা বলতে বেপর্দা নষ্ট মেয়েটিকে বোঝানো হয় না। একজন নারীকে বুঝানো হয়েছে, যে সার্বিকভাবে তার স্বতীত্বকে রক্ষা করে ধর্মীয় বিধি-বিধান মান্য করে জীবনকে আল্লাহর পথে উৎসর্গিত করবে। 
পরিশেষে, আমাদের মনে রাখতে হবে, নারীদের যেমন পর্দা করা ফরয তেমনি তাদেরকে পর্দামত চলতে সুযোগ দেয়া পুরুষদের উপর ফরয। আর যে সব পুরুষরা নারীদের অভিভাবক তাদের জন্য ফরয হল নারীদের পর্দায় রাখা।