Saturday 4 June 2016

সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী রহ. এর সঠিক ইতিহাস

   
মাওঃ আবুল কালাম আজাদ
.........................মাওলানা আবুল কালাম আজাদ

৮৮৫ সাল । এশিয়া মহাদেশ তথা বার্মা থেকে হিমালায়ন বিরাট এলাকা বৃটিশদের শাসনাধিনে চলে যায় । তখন ভারতে দুটি জাতি হিন্দু ও মুসলমানের অবস্থান ছিল । বৃটিশদের আধিপত্য থেকে মুক্তি পেতে অনেক আজাদী আন্দোলন সংগ্রাম সংঘঠিত হয় এ উপমহাদেশে । এর মদ্ধে সাইয়্যিদ শহীদ আহমদ বেরলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর আন্দোলন অবিস্মরনিয় । উপমহাদেশের মুসলমান ও হন্দিু সম্প্রদায় বৃটিশ খ্রিষ্টানদেরকে অন্যায় জবরদখলকারী হিসেবে চিহ্নিত করলেও স্থানীয় হিন্দুরা উপমহাদেশে খ্রিষ্টান শাসনকে সহঝ ভাবে মেনে নিয়েছিল । কিন্তু মুসলমানরা এদের শাসন ক্ষমতা মেনে নিতে পারেনি । মুসলমানদের অসহযোগি মনভাব আর হিন্দু সম্প্রদায়ের আনুগত্য নিয়ে বৃটিশরা শুরু করে ভারত উপমহাদেশের শাসন । মুসলমানরা তাদের শাসন ভান মেনে না নিয়ে এ অবস্থাতে “দারুল হারব” তথা শত্রু আক্রান্ত অঞ্চল বলে ঘোষণা করেন । ইসলামের দৃষ্টিতে দারুল হারব হল- সেখানে ইসলামী হুকুমত ক্বায়েম করার জন্য জিহাদ চালিয়ে যাওয়া অথবা সেখান থেকে হিজরত করা মুসলমানদের ফরজ হয়ে পরে । সেদিন অনুগত হিন্দুদের সহযোগিতায় বিদেশী বেনিয়াদের দখলে ইপমহাদেশ চলে যাওয়াতে মুসলমানরা শুধু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাচ্যুত হয়নি বরঙ তাদের ধর্মীয়, শিক্ষা, সামাজিক, অর্থনৈতিক, এবং সাংস্কৃতিক অগ্রাসনের শিকার হন । যে ভূমি আন্তর্ঝাতিক অঙ্গনে ‘দারুল ইসলাম’ (মুসলিম রাষ্ট্র) হিসেবে পরিচিত ছিল, আজ তা মুসলমানদের উপর অত্যাচার-নিপিড়নের কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হয় । ১৭৫৭ সালের পর থেকে পুরো ১০০ বছরের বেশী কাল পর্যন্ত মুসলমানরা হারিয়ে যাওয়া ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য এবং ইসলাম ও মুসলীম জাতীকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিপ্লবের আগুন প্রজ্জ্বলিত রাখেন । মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অবসান, বর্বর মারাটিদের আক্রমণ, পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের অনৈতিক নিয়ম বহির্ভুত জয়, পাঞ্জাবের শিখদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ এসব পরিবেশ পরিস্থিতির ফলে বৃটিশ বেনিয়ারা উপমহাদেশের আদিবাসীদের ঘাড়ে ভাগ্য নিয়ন্ত্রা হিসেবে জগদ্দল পাথরের মতো চেঁপে বসল । মুষলমানদের কিছু ভুলের কারনে সব হারিয়ে গেলেও তাদের অমূল্য সর্ব শেষ সম্পদ ‘ঈমান’ টুকু তারা হারানোরোধ করতে যে কোন কিছুর বিনিময়ে প্রস্তুত ছিল । ঈমান রক্ষার তাগিদে মুসলমানগণ নতুন চেতনা নিয়ে আবার ইসলামী হুকুমত ক্বায়েম এর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন । ঝীবন মরন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়লেন মজলুম মুসলমানরা । এ সংগ্রামের মধ্যে উল্লেকযোগ্য হচ্ছে-১৮৫৭ সালের দেশ ব্যপী গন আনেদালন, ১৮৬৪ সালের সীমান্ত অভিযান, ১৭৬৫ সালে ফকির বিদ্রোহ, তিতুমীর রহ. এর বিপ্লব, হাঝী শরীয়াতুল্লাহ রহ. এর বিপ্লব, দুদু মিয়ার আন্দোলন, এবং সৈয়দ আহমদ শহীদ রহ. এর ঐতিহাসিক বালাকোটের জিহাদ ইত্যাদি । তিনি তার পুরো জীবন কাটিয়ে দেন মুসলীম জাতীর হারানো গৌরব পুনুদ্ধারে । তিনি দেশের পরিবেশ গভির ভাবে অবলকন করেন । পরিবেশ প্রতিকূল থাকায় তিনি কৌশলগত কারনে সরাসরি সরাসরি রাজনৈতিক আন্দোলনের পথে না গিয়ে বিভিন্ন ধর্মিয় সংস্কার কাজের মাধ্যমে আন্দোলন শুরু করেন । তার আন্দোলনের নাম ছিল ‘তরিকায়ে মুহাম্মাদীয়া’ তিনি মুসলমানদের পতনের মূল কারণ হিসেবে দেখলেন, মুসলমানরা সত্যিকার ইসলামী আদর্শ থেকে সরে যাওয়া । তাই তিনি কুরআন-হাদীসের প্রতি কঠোর আনুগত্যকে ভিত্তি করেই বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সুচনা করেন ।
সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরলভী রহ. এর জন্ম ও বংশ পরিচয়:-
১ম মত:-হযরত হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু তিনার বংশের কিছু লোক ১২১১ সাল থেকে ১২৩৬ সালে ভারতবর্ষে আগমন করেন । তখন ভারতবর্ষের সুলতান ছিলেন শামসুদ্দিন ইলতুতশিশ । তারা এসে ভারতের মানিকপুর নামক স্থানে বসবাস করেন । আর এখান থেকেই ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন । হযরত সিইয়্যিদ আহমদ বেরলভী রহ. এর পূর্ববর্তী ৪র্থ পুরুষগণ উত্তর প্রদেশের অযধ্যার রায়বেরলভী এলাকায় বসবাস করেন । তার ৪র্থ পুরুষ শাহ আলামুল্লাহ রহ. । তিনি ছিলেন প্রক্ষাত এক বুযুর্গ । যাকে শ্রদ্ধা করতো সম্রাট শাহ জাহান ও আওরঙ্গজেব । তাদের আগমনের উদ্দেশ্য ছিল ইসলাম প্রচার । সৈয়দ শহীদ আহমাদ রহ. ১৭৮৬ সালের ২৯ নভেম্বর মোতাবেক ১২০১ হিজরীর ৬ সফর রায়বেরলভীতে সৈয়দ পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন । তার পিতা ছিলেন সৈয়দ মুহাম্মাদ ইরফান রহ. ।
(সুত্র:- দৈনিক ইনকিলাব)
২য় মত:-
সাইয়েদ আহমাদ শহীদ জন্মগ্রহণ করেন ২৯ই নভেম্বর ১৭৮৬ খৃষ্টাব্দে ভারতের অযোধ্যা জেলায়। তার বংশতালিকা চতুর্থ খলীফা আলী (আঃ)-এর সাথে মিলিত হয়েছে। বংশীয় রীতি অনুযায়ী চার বৎসর বয়সেই তাকে মক্তবে পাঠানো হয়। কিন্তু বাল্যকাল হতেই তাঁর মধ্যে শিক্ষার চাইতে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ অত্যধিক মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। তাঁর নিকটে কপাটি তথা সৈনিকদের বীরত্বমূলক খেলা ছিল খুবই প্রিয়। তাঁর খেলাধূলার মধ্যে ব্যায়াম ও শরীরচর্চার বিষয়টি মুখ্য ছিল। সাইয়েদ সাহেবের ভাগিনা নওয়াব ওয়াযীরুদ্দৌলার সেনাপতি সাইয়েদ আব্দুর রহমান বলেন, সূর্যোদয়ের পর এক ঘণ্টা পর্যন্ত সাইয়েদ সাহেব ব্যায়াম-কুস্তিতে কাটাতেন। ফলে তিনি অত্যধিক শারীরিক সক্ষমতা অর্জন করেছিলেন। সাইয়েদ সাহেবের জীবনের প্রারম্ভ থেকেই যুদ্ধের প্রতি আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। দ্বীনের স্বার্থে যুদ্ধ করার প্রবল মানসিকতা তখন থেকেই তাঁর মাঝে বিরাজ করছিল। একদা হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যায়। সাইয়েদ সাহেব তাতে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করলে তাঁর ধাত্রী মাতা তাঁকে কোন মতেই যেতে দিলেন না। আর তাঁর মা তখন ছালাতরত ছিলেন। সাইয়েদ সাহেব মাতার সালাম ফেরানোর অপেক্ষায় ছিলেন। মা সালাম ফিরিয়ে ধাত্রীকে বললেন, শোনো বিবি, আহমাদকে তুমি অবশ্যই স্নেহ কর, কিন্তু তা কখনো আমার স্নেহের সমান হতে পারে না। এটা বাঁধা দেয়ার সময় নয়। যাও বৎস, আল্লাহ নাম স্মরণ করে এগিয়ে যাও। কিন্তু সাবধান পৃষ্ঠ প্রদর্শন কর না। অন্যথায় তোমার চেহারা দেখব না। যদি শত্রুরা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তা ধরে তাহলে তাদের রাস্তা ছেড়ে দিও। সাইয়েদ সাহেব যখন সংঘর্ষস্থলে গিয়ে পৌঁছলেন তখন শত্রুরা বলতে লাগল, আমাদের রাস্তা ছেড়ে দিন আমরা চলে যাব। আপনাদের সাথে কোনো বিবাদ নেই। তখনই তিনি সাথীদের বললেন, এদের যেতে দাও কোন প্রকার বাধা দিও না।(সুত্র:- বাংলা পিডিয়া)
সাইয়্যেদ আহমদ ব্রেলভী রহঃ এর বংশগত শাজরা নিম্নে তা ক্রমানুসারে উল্লেখ করা হলঃ
১/ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
২/ হযরত ফাতেমা রাঃ, সহধর্মিণী হযরত আলী রাঃ
৩/ হযরত ইমাম হাসান রাঃ
৪/ হযরত হাসান মুছান্না রঃ
৫/ হযরত আব্দুল্লাহ আল-মাহাদ রঃ
৬/ হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ সাহিবুন নাফসিজ যাকারিয়া রঃ
৭/ হযরত সৈয়দ আবু মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ রঃ
৮/ হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ সানী রঃ
৯/ হযরত সৈয়দ হাসান রঃ
১০/ হযরত সৈয়দ আবু মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ রঃ
১১/ হযরত সৈয়দ কাছিম রঃ
১২/ হযরত সৈয়দ আবু জাফর মুহাম্মদ রঃ
১৩/ হযরত সৈয়দ আবুল হাসান আলী রঃ
১৪/ হযরত সৈয়দ হাসান রঃ
১৫/ হযরত সৈয়দ ঈসা রঃ
১৬/ হযরত সৈয়দ ইউসুফ রঃ
১৭/ হযরত সৈয়দ রশীদুদ্দীন আহমদ মাদানী রঃ
১৮/ হযরত সৈয়দ কুতুবুদ্দীন মুহাম্মদ আল হাসানী ওয়াল হোসাইনী রঃ
১৯/ হযরত সৈয়দ নিযামুদ্দীন রঃ
২০/ হযরত সৈয়দ রুকনুদ্দীন রঃ
২১/ হযরত সৈয়দ সদরুদ্দীন রঃ
২২/ হযরত সৈয়দ কিয়ামুদ্দীন রঃ
২৩/ হযরত সৈয়দ আলী রঃ
২৪/ হযরত সৈয়দ আহমদ রঃ
২৫/ হযরত সৈয়দ যায়নুদ্দীন রঃ
২৬/ হযরত সৈয়দ যায়িদ সদরুদ্দীন সানী রঃ
২৭/ হযরত সৈয়দ কুতুবুদ্দীন মুহাম্মদ সানী রঃ
২৮/ হযরত সৈয়দ আলা উদ্দিন রঃ
২৯/ হযরত সৈয়দ মাহমুদ রঃ
৩০/ হযরত সৈয়দ আহমদ রঃ
৩১/ হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ মুয়াযযাম রঃ
৩২/ হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ ফাযায়েল রঃ
৩৩/ হযরত সৈয়দ ইলমুল্লাহ রঃ
৩৪/ হযরত সৈয়দ হুদা মুহাম্মদ রঃ
৩৫/ হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ নূর রঃ
৩৬/ হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ ইরফান রঃ
৩৭/ হযরত সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী রঃ
তথ্যসূত্রঃ সীরাতে সৈয়দ আহমদ শহীদ রহঃ পৃঃ ৯২, ছাওয়ানিহে আহমদী, আয়নায়ে উধ, মাখযানে আহমদী।
( সৈয়্যেদ সাহেব "মা" যেমন ছিলেন অত্যন্ত খোদাভীরু ও দ্বীনদার তেমনি তাঁর বাবাও)
জেহাদের উদ্যম ও মায়ের ত্যাগ:
একবার কতিপয় অত্যাচারী পৌত্তলিকেরা মুসলমানদের উপর আক্রমণ করে। পাড়া প্রতিবেশী মুসলমানেরা অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়েন, সৈয়্যেদ সাহেবও যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেন। কিন্তু খাদিমা তাঁকে বার বার বারণ করতে থাকে। আম্মা সাহেব তখন নামাজে রত ছিলেন। নামাজান্তে "মা" খাদিমাকে ডেকে বললেনঃ "তুমি আহমদকে ভালবাস সত্য কিন্তু আমার চেয়ে বেশী নয়। এখন বারণ করার সময় নয়" তারপর সৈয়্যেদ আহমদ (রঃ) কে সম্বোধন করে বললেন "বাবা, আল্লাহর নামে বেরিয়ে পড়ো কিন্তু সাবধান কাফেরদের ভয়ে পালিয়ে এসনা। যদি পালিয়ে আস তাহলে তোমার মুখও আর দেখব না"
সৈয়্যেদ সাহেব ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে দেখলেন যে ঝগড়াটার মীমাংসা হয়ে গেছে।

শিক্ষা জীবন:-
সা্ইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী রহ. এর কৈশর জীবনের লেখা পড়ার সার সংক্ষেপ হচ্ছে বংশের নিয়মানুযায়ী চার বছর চার মাস চার দিনের সময় মক্তবের মাধ্যমে শুরু করেন প্রাথমিক শিক্ষা । শিক্ষার্জনে পরিবারের পক্ষ থেকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয় । তিন বছর মক্তবে অধ্যয়ন করে পবীত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা করেন । তিনি ফরাসী ভাসায় পারদর্শী ছিলেন । ইলমে শরীয়াতের মৌলিক খুটিনাটি বিষয়েও ছিলেন সমান পারোদর্শী । পবিত্র কুরআন-হাদীসের ব্যাখ্যা সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করে সবার নিকট প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেন । অধিক শিক্ষা অর্জনের জন্য তিনি লাক্ষনৌতে গমন করেন । সেখানে অধ্যয়নের পাশাপাশি জিহাদের চেতনা তার মধ্যে প্রবলভাবে জাগ্রত হয় । লাক্ষনৌর বিদ্যার্জন সমাপ্তি টেনে তিনি দিল্লির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন । সেখানে শাহ আব্দুর রমি মুহাদ্দেসে দেহলভী রহ. এর প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় লেখা পড়া করেন । সর্বকালের অনুষ্মরণীয় মুহাদ্দিস, তৎকালিন যুগের শ্রেষ্ঠ আলেম শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দেস দেহলভী রহ. এর নিকট ১৮১৭ সালে শিষ্যত্ব লাভ করেন ।
শৈশব কাল :-
তিনি একজন মুজাহিদ হয়ে ইসলামের জন্য জিহাদ করবেন তার শৈশবকালের আচরণ থেকে বুঝা যায় । তিনি নিয়মিত শরীর চর্চার মাদ্ধমে শারীরিক যোগ্যতা অর্জনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতেন । সাইয়্যিদ সাহেব পানিতে সাঁতার কাটতেও দক্ষ ছিলেন । পানির নিচে ডুব দিয়ে তিনি অনেকক্ষণ থাকতে পারতেন, ডুব দিয়ে থাকা অবস্থায় দ’রাকাত নফল নামায পড়া যেত । পড়ার সাথীদের নিয়ে তিনি ‘লশকর-ই-ইসলাম নামে’ একটি সংগঠন করেন । সর্বদা অভাবী মানুষের প্রতি ছিল তার আলাদা সুনজর । শিক্ষা জীবনে তিনি হিন্দু সমাজের কুসংস্কার মুসলিম সমাজে প্রভাববিস্তারে আলামত দেখতে পান । মুসলীম জাতীর দূর্বলতা, কাপুরুষতা তার নজরে ধরা পড়ে । কিভাবে এই অবস্থা থেকে জাতীকে জাগিয়ে তোলা যায় তার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন ।

বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ :-
১২১২ হিজরীর শেষ দিকে দিল্লী থেকে লেখা পড়া শেষ করে বাড়িতে চলে আসেন আত্মীয়-স্বজনরা এ সময় তার বিবাহের বন্দবস্ত করেন । নাসিরাবাদের বিবি জোহরার সাথে তিনার শুভ বিবাহ হয় । ১২২৪ হিজরীতে ‘সারা’ নামে এক কন্যা সন্তান তার ঘর আলোকিত করে । সৈয়দ সাহেব বাড়িতে আসলে তার নির্ধারিত কর্ম সূচিতে সময় ব্যয় করতেন । নিকটবর্তী এলাকায় দাওয়াতী কাজ, পারিবারিক, বংশীয় এবং গ্রামের বিভিন্ন ঝগড়া-বিবাদের সমাধান করে পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগিয়ে তুলতেন এবং জিহাদী প্রেরণায় উজ্জীবিত করতেন ।
তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থা :-
তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয় । মুসলমান শাসকগণ ইসলামী আদর্শের পরিবর্তে বিভিন্ন অপকর্ম ও আরাম-আয়েশে দিন কাটিয়ে দেন । কিন্তু এ উদাসীনতার পরিণাম সম্পর্কে একবারও চিন্তা করেননি । মোগল সম্রাজ্যের শক্তি তখন নিভু নিভু অবস্থা । নিরাশার মধ্যে আশার আলো জ্বাগিয়ে দিতে এগিয়ে আসলেন মরদে মুজাহিদ, হায়দার আলী ও টিপু সুলতান । মুসলমানদের জাগিয়ে তুলতে তাদের প্রচেষ্টা এক অনন্য ভূমিকা পালন করে । কিন্তু মুসলমানদের স্বার্থ পরতা ও পরস্পরের বিরোধিতার ফলে তাদের আন্দোলন সফলতার মুখ দেখেনি । এ সুযোগে মারাঠারা মোগল সম্রাজ্যের বিশাল এলাকায় হাঁটু গেড়ে বসে । মুসলমানদের আভ্যন্তরিণ কোন্দল, অরাজকতা ও নবাব আলীবর্দী খানের ইন্তেকালের কারণে কিছু দিন পর বাংলা, উড়িশ্যা, বিহার ইংরেজ বেনিয়াদের দখলে চলে যায় । এর পরই ইংরেজরা দিল্লী দখল করে । এ পরিবেশ পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন সৈয়দ আহমদ শহীদ রহ. । ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় এ সময় মুসলমানগণের জন্য তিনটি মাত্র পথ খোলা ছিল । ১. সত্যের পথ ছেড়ে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে গা ভাসিয়ে দেওয়া । ২. সত্যের পথ আকরিয়ে ধরা এবং এর ফলে যত ঝড় তুফান আসুক ধৈর্য-সংজমের সাথে সহ্য করে শেষ হয়ে যাওয়া । ৩. অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রাণ পণ জিহাদ করে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া । এ দুরাবস্থা কবলিত মুহূর্তে ইসলামী আন্দোলনের বীর সিপাহ সালার সৈয়দ আহমদ রহঃ তৃতীয় পথ তথা জিহাদের পথ বেছে নিলেন । তাই ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে নবাব আমির খানের সেনা বাহিনীতে যোগদান করেন । কারণ, আমির খানের অধিনে চল্লিশ হাজার সিপাহী এবং একশত চল্লিশটি তোপ ছিল । এটা ছিল ইংরেজদের একটি ভয়ের কারন । এ বিরাট শক্তি মুসলমানদের কাজে লাগানোর জন্য তিনি যোগদান করেন । কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে নবাব আমির খান ইষ্ট ইন্ডিয়া কম্পানির সাথে হাতে হাত মিলান । সেদিন থেকে সৈয়দ শহীদ আহমদ বেরেলভী রহঃ সে বাহিনী থেকে বেরিয়ে আসেন । কারণ মুসলমানদের উপকারে আসার আর সুযোগ রইলো না ।

জীবনের মিশন:-
জীহাদী চেতনা নিয়ে সৈয়দ আহমাদ শহীদ বেরলভী রহমাুতল্লাহি আলাইহি বীর সংগঠকরূপে গমন করতে থাকেন ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চল । মুসলমানদের ইসলামী শরীয়াতের অলোকে চরিত্র গঠনের দাওয়াতী কাজে মনোনিবেশ করেন । ইসলামী শাসন ওকিশুদ্ধ আকিদাহ প্রতিষ্ঠাই ছিল তার লক্ষ । চরিত্র সংশোধন ও শরিয়াতের আনুগত্যের জীবন পরিচালনা করতে তার দরবারে হাজার হাজার মানুষের আগোমন ঘটতো ।

তরীকায়-এ-মুহাম্মাদী আন্দোলন:-
প্রথমে সূফীবাদের চার তরিকায় অর্থাৎা তিনি, চিশ্তীয়া, কাদেরিয়া, নাকশবন্দিয়া ও মুজাদ্দেদিয়ায় তরীক্বায় দীক্ষা দিয়ে পরে তাঁর মুরিদদের মুহাম্মদীয়া তরিকায় দীক্ষা দিতেন । সূফীবাদ বা আধ্যাত্মিক চিন্তা ধারায় এ তরিকার কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু ছিল সমাজ সংস্কার ও জিহাদ । এ মুহাম্মদি তরিকায় আধ্যাত্মিক জীবন ও মারিফাতের সাথে শরিয়তের আইন - কানুন প্রবর্তনের প্রতি অধিক মনোযোগ দেয়া হয় । ঐতিহাসিকদের মতে, তরিকায়ে মুহাম্মদিয়া ছিল সূফীবাদের উদাসীনতা ও ধমীয় আচার-আচরণের প্রতি অবজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ। পীর পূঁজা, কবর পূঁজা, হজ্জ পালনে বাঁধাদান, বিধবা বিবাহে আপক্তি, শিয়াদের ভ্রান্ত মতবাদ ও অন্যান্য কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ইমামুল হিন্দ শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিছে দেহলভী (র.)-এর ক্ষোভ ও প্রতিবাদের বহিঃপ্রাকাশ ঘটেছে তাঁর পুত্র ও খলিফা সিরাজুল হিন্দ ইমাম শাহ আব্দুল আযীয দেহলভী (র.)-এর তারগীব-ই-মুহাম্মদিয়া বা তরিকেয়ে মুহাম্মদিয়া। তাঁরই নিদর্েশে সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ বেরেলভী (র.)সংস্কার ও জিহাদ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এ মুহাম্মাদি তরিকার সাথে অন্যান্য তরিকার কোন মৌলিক পার্থক্য নেই ।তবুও সশস্ত্র সংগ্রামের কর্মসূচী থাকায় এ তরিকায় আধ্যাত্মিক দর্শনের সাথে রাজনীতির প্রত্যক্ষ যোগাযোগ।
যামানার শ্রেষ্ঠতম আলিম ও ওলি-আল্লাহ মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী সাহেবের মতে, এ মুহাম্মদি তরিকার দ্বারা অন্যন্য চার তরিকার বিরোধিতা করা হয়নি,এ মুহাম্মদি তরিকার দ্বারা অন্যন্য চার তরিকার বিরোধিতা বিরোধিতা করা হয়নি।পূবর্োক্ত চার তরিকার সমন্বয়ে আধ্যাত্মিক ও পার্থিব উন্নতির পত প্রদর্শিত হয়েছে এ তরিকায়। তার মতে সাইয়্যেদ সাহেব এ তরিকাকে দুই ভাগে ভাগ করেন-রাহে বিলায়েত বা আধ্যাত্মিক পথ ও রাহে নবুয়ত বা নবী প্রদর্শিত পথ মিলেই তরিকায়ে মুহাম্মদিয়া। কারো মতে তরিকায়ে মুহাম্মদিয়া বলতে ধমর্ীয় সংস্কার, সমাজ সংস্কার ও সশস্ত্র সংগ্রাম বা জিহাদ আন্দোলন বুঝায়। এ আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের জন্যে সে সব আচার ও নীতির প্রবর্তন করা, যা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সময় প্রচলিত ছিল। সাইয়্যিদ আহমদ (র.) বলেছেন. আমার তরিকা আমার পিতকুলের,নবীদের শ্রেষ্ঠ নবীর তরিকা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর তরিকা বা পথ ।আমি একদিন পেট পুরে আহার করি ও আল্লাহর প্রশংসা করি এবং অন্যদিন উপবাসে থেকে ধৈয্যর্ ধারণ করি।
উপমহাদেশের এমন কোন সিলসিলা বা দরবেশ পরম্পরা নেই যার বরেণ্য ব্যক্তিগণ সাইয়্যিদ সাহেবকে নিজের উধ্বর্ে ন্থান দেননি এবং তাঁর নিকট থেকে উপকৃত হননি। তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও সর্বজন মান্য হওয়া এবং তাঁর তরিকার মহত্ব ও ফজীলত, তাঁর প্রতি ভালবাসা ও আস্থা রাখা সম্পর্কে সে যামানার সকল আলিম ও শায়খ একবাক্যে ঐকমত্য পোষণ করেছেন ।সাইয়্যিদ সাহেবের হাতে বাইআত করার ভিতরে রাসূলুল্লাহ ( সাঃ) -এর সন্তুষ্টি নিহিত রয়েছে বলে বিশ্বাস করতেন। তাঁর প্রতি ভালবাসা রাখা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিশেষ আলামত বলে বিবেচিত হত। মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী সাহেব লিখেছেন- তাঁর (সাইয়্যিদ সাহেবের ) তরিকায় যে অগণিত বরকত ও আভান্তরীণ সৌন্দর্য রয়েছে তা'বলাই বাহুল্য ।বাহ্যিকভাবেও এতে একটি আশ্চর্যজনক বরকত পরিলক্ষিত হয় । তা' হল, কোন লোক তাঁর তরিকায় বাইআত হওয়ার ইচ্ছা করলে পূর্বাহ্নেই প্রতিমা পূজা,শিরক, বিদআত, নাচ,-গান ও ঢোল-তামাশা পরিত্যাগ করার উপর দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে তবে বাইয়াত হয়। সুতরাং সাইয়্যিদ সাহেবের দীক্ষা গ্রহণ করা এদেশে সত্যিকার অর্থেই ইসলাম গ্রহণের পরিচয় বাহক।
এক সফরে রামপুর অবস্থানকালে তরিকায়ে মুহাম্মদিয়া সম্পর্কে সাইয়্যিদ আহমদ বেরেলভী সাহেবকে প্রশ্ন করা হয়। তিনি উত্তরে বলেন, তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়ার তাৎপর্য এই-প্রত্যেক মানুষের প্রতিটি কাজ যেন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য হয়।যেমন-পাপ হতে বিরত থাকার জন্যে বিয়ে করা, শরিয়ত সিদ্ধ নিয়মে অন্ন সংন্থানের জন্য বৈধ সম্পদ সংগ্রহ করে নিজেকে ও পরিবারবর্গকে পরমুখাপেক্ষি হতে না দেয়া, রাতের শেষে তাহাজ্জুদ নামাজ ও ইবাদত করার উদ্দাশ্যে প্রথম দিকে নিদ্রা যাওয়া, এভাবে জীবনের প্রতিটি কাজে একমাত্র খোদার সন্তুষ্টি লাভকেই মূল উদ্দেশ্য মনে করা তরিকায়ে মুহাম্মদিয়ার সার।
মাওলানা কারামত আলী জৌনপূরী (র.) বলেন, হযরত পীর সাহেব তাঁর তরিকার নাম মুহাম্মদিয়া এ কারণে রেখেছিলেন যে, কোন কোন ওলি-আল্লাহ কোন কোন নবীদের পদানুসরণ করে চলে থাকেন, যা নজর বরকদম স্বরূপ।মুর্শিদ বরহক হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) -এর হুবহু পদানুসরণ করে চলতেন বলে তাঁর তরিকার নাম তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়া রেখেছিলেনওলি-আল্লাহ কোন কোন নবীদের পদানুসরণ করে চলে থাকেন, যা নজর বরকদম স্বরূপ। কলকাতায় মৌলভী গোলাম সোবহান মরহুম হযরত মুর্শিদে বরহককে প্রশ্ন করেছিলেন-আপনি আপনার তরিকার নাম মুহাম্মদিয়া কেন রেখেছেন? তিনি উত্তর দেন, উহা "নজর বরকদম" এর ব্যাখ্যা স্বরূপ। এ উত্তরের বর্ণনা সাইয়্যেদ মুহাম্মদ জাহের সাহেব লিখেছেন। তিনি মুর্শিদ বরহক এর নিকটতম আত্মীয় এবং খলীফাদের মধ্য ছিলে । ঐ সময় তিনি হযরত সাইয়্যেদ সাহেবের সঙ্গে ছিল। বর্ণনা নিম্নরূপ-তিনি বলেন, এরূপ বুঝে লও যে, কোন এক শহরের একজন বাদশাহ তার প্রত্যেক কর্ম ও ব্যবসায়ের আগ্রহ আছে। এজন্যে ঐ শহরের যত ব্যবসায়ী আছে প্রত্যেকে নিজ নিজ ব্যবসায় ও কারিগরীর দ্বারা বাদশাহকে সন্তুষ্ট করে এবং তার বাদশাহের নৈকট্যও লাভ করে। কারিগরদের মধ্যে কেউ কেউ এমন আছে যে, কেউ একটি কারিগরী জানে, কেউ দু,টি কারিগরী জানে, আবার কেউ হয়তো তিনটি কারিগরী জানে। এভাবে যতই উপরে যাক প্রত্যেকেই নিজ নিজ কারিগরীর তুলনা বাদশাহের আকর্ষণ লাভ করছে। আর যত কারিগরীই হোন না কোন প্রত্যেকটিই বাদশাহর নিকট গ্রহণীয়। মনেকরুন, ঐ সকল লোকদের মধ্যে এমন লোকও আছেন, যিনি সর্ব প্রকারের কাজ ও কারিগরীতে দক্ষ এবং তিনি বাদশাহর নিকটতম। আরো মনে করুন, তাদের মধ্যে এমন লোকও আছেন, যিনি মুন্শীগিরিতে অদ্বিতীয় এবং তীর ব্যবহারে খবই পটু, অশ্বারোহণে বেশ দক্ষ, এবং কুস্তিগীর পলওয়ান, এমন অদ্বিতীয় সৈনিক যেন তিনি ষুদ্ধের মাঠে শত্রুদের সম্মুখ হতে পলায়ন করার কথা জানেন না, মিস্ত্রি ও কামারের কাজও খুব উত্তম জানেন, এ ভবে যত কারিগরী আছে, প্রত্যেকটির মধ্যে তাঁর বিশেষ আগ্রহ এবং দক্ষতা আছে। ঐ ব্যক্তি সর্বক্ষণ বাদশাহর দরবারে উপস্তিত থাকে। কারণ বাদশাহর যখন যে কাজের দরকার, তার দ্বারা ঐ কাজ করিয়ে নেন। এখন একথা জানা দরকার যে, পূর্ববতর্ী যত বুজুর্গ লোক যারা তরিকার মালিক যেমন-হযরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতি (র.) হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দি (র.) প্রমুখ প্রত্যেকেই আমাদের পেশওয়া আগ্রগামী ছিলেন এবং ঐ সকল বুজুর্গদের তরিকার মধ্যে আমি বাইআত গ্রহণ করে থাকি। আমি এ দাবী করি না যে, আমি তেঁদের চাইতে উত্তম।কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আমাকে ঐ সকল বুজুর্গদের তরিকার মধ্যে ক্ষমতা দান করেছেন এবং আমি আল্লাহতায়ালার জিকির ও ইবাদাতে যেরূপ মগ্ন থাকি এবং আত্মশুদ্ধি ও চরিত্র শুদ্ধির প্রতি যতটুকু দৃষ্টি রেখে থাকি, সেরূপ শক্তি আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে বিশেষভাবে দান করেছিলেন, তা হতে এ ফকিরকে সামান্য পরিমাণে কিছু দেয়া হয়েছে। আর সে শক্তিগুলো হল-জিহাদের কাজ, হুদুদ ও কিছাছের আদেশ জারি, শিরক ও বিদআতগুলোর ধ্বংস করা ইত্যাদি। আল্লাহর রহমতে আমি ঐ কাজগুলোর সমাধান করার ক্ষমতা আমার মধ্যে বিদ্যমান দেখতে পাই। আল্লাহতায়ালা আমাকে শক্তি দান করেছেন এর দ্বারা আমি বাসনা এবং সে বাসনা দ্বারা আশা করি যেন ঘোড়ায় আরোহণ করে কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করি এবং যুদ্ধের অস্ত্র, তরবারি, নেজা, বশর্া, তীর, কামান বন্দুক ও পিস্তল বেঁধে এবং ঢাল নিজের শরীরে পরিধান করে আল্লাতায়ালার কলেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল্লাল্লাহকে প্রচার করার জন্যে ঐ সকল কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করি। ঐ প্রকার প্রদত্ত শক্তির দ্বারা পরিখা খনন নিজ হাতে করতে পারি, কুড়াল হাতে করে কাঠ চিড়তে পারি, হুদুদ ও কিছাছ (শরিয়ত অনুযায়ী শাস্তি) জারি করতে পারি। অতএব, এ খাছ নিয়ামতের আকাংখায় আমি আমার তরিকার নাম মুহাম্মাদিয়া রেখেছি। কারণ, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ঐ সকল কাজগুলো আপন পাক জাতের দ্বারা সম্পন্ন করেছেন।
জৌনপুরী সাহেব বলেছেন, যেহেতু তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়া এক কথায় হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) -এর হুবহু অনুসরণকারী, কাজেই যাবতীয় তামালত এ তরিকার মধ্যে একত্রিত হয়ে রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ধর্ম ও মাযহাবের উপর দৃঢ় থাকার কথা যা সুরায়ে হাশরের নিম্ন আয়াতের উপর আমল করলে হাছিল হয়, এর নামই তরিকায়ে মুহাম্মদিয়া।
রাসুল তোমাদের জন্যে যে সকল আদেশ আনয়ন করেছেন তা গ্রহণ কর আর যা নিষেধ করেছেন তা হতে বিরত থাক। (আল-কুরআন)।
তিনি বলেছেন, আসল কথা এই যে, তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়া প্রবেশ করলে অন্বেষণকারী সরল তরিকাতেই প্রেবেশ করে। অপর দিকে তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়াকে অস্বীকার করলে সমস্ত তরিকাই অস্কীকার করাহয়। কাননা তরিকায়ে মুহাম্মদিয়া সমস্ত তিকার সার।এ শরিয়ত অনুসরণ করার অর্থ সমস্ত শরিয়তের অনুসরণ করা।
তিনি আরোও বলেছেন, তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়া শেষ যামানার লোকদের জন্যে কিমিয়া স্বরূপ। এ তরিকার অসাধারণ শক্তি এই যে, পীর ভাইদের মধ্যে পরস্পর ভালবাসা জন্মিয়ে দেয়। এ তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়ার প্রকৃত উদ্দেশ্য ও প্রধান স্তম্ভ হল মোকামে উবুদিয়াত অর্থাৎ প্রকৃত বান্দায় পরিণত হওয়া।
তিনি বলেছেন, পঞ্চম তরিকা-তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়া কোথা হতে আসল, একথা বলা অজ্ঞতার পরিচায়ক। পূর্ব হতেই বহু তরিকা প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে। এ চার করিকা ব্যতীত ,,চারি পীর চৌদ্দ খান্দান,, একথা যারা বলে তাদের একথা সম্পূর্ণ ভুল। প্রকৃত পক্ষে এসব কথা প্রত্যেকে নিজ নিজ জ্ঞানানুযায়ী বলেথাকে। পীরের খান্দান বহু আছেন এবং কি কিয়ামত পর্যন্ত হতে থাকবে।
তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিপরীত বিশ্বাস করবে, সে ব্যক্তিই তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়ার বিরোধী। তাঁর বর্ণনামতে-তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়ায় প্রবেশ করলে তার ফল এই হয় যে, সর্বসাধারণ স্ত্রী-পুরুষ কেবল তওবা করার জন্যে এ তরিকায় প্রবেশ করলে বাইআত করার সঙ্গে সঙ্গেই তারমধ্যে এক প্রকারের আন্তরিক পবিত্রতা তৎক্ষণাৎ লাভ হয়। যে ব্যক্তি ছুলুক ইল্লাল্লাহ (আল্লাহর নৈকট্য লাভ) এই নিয়তে এ তরিকায় প্রবেশ করে সে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার মেহেরবাণীতে ৮।১০ দিনের মধ্যেই নিজ উ!দ্দেশ্য অথবা উদ্দেশ্য লাভের কাছাকাছি উপস্তিত হতে পারবে,জিকির ও মোরাকাবার মিষ্টতা উত্তমরূপে বুঝতে পারবে।
হযরত মাওলানা শাহ্ মুহাম্মাদ আবদুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী (ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী) বলেন, চার তরিকার প্রত্যেকটির নাম বিশেষ বিশেষ তরিকার বুজুর্গানদের নামকরণে হয়েছে। যেমন, হযরত বড় পীর সাহেব (র.) যে তরিকার তরবিয়ত দিতেন এর নাম কাদিরিয়া তরিকা। হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দি (র.) এর তরবিয়ত প্রদানকৃত তরিকার নাম নকশবন্দিয়া তরিকা। হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী শায়খ আহমদ সিরহিন্দ (র.) যে তরিকার তালিম দিতেন এর নাম মুজাদ্দেদিয়া তরিকা। তেমনিভাবে আমিরুল মুমিনীন হযরত সাইয়্যিদ আহমদ বেরেলভী (র.) যে তরিকার তারবিয়ত দিতেন এর নাম তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়া। তাঁর নিজের নামানুসারে তরিকায়ে আহমদিয়া না হয়ে তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়া হওয়াই এ তরিকার বৈশিষ্ট্য। হযরত বেরেলবী (র.) -এর পূর্বেকার তরিকতের ইমামগণের সময়ে মানুষের জাহেরী আমল তুলনামূলক উত্তম ছিল। ইমামগণ শুধু মানুষকে বাতেনী ইলম ও আমলের তালিম দিতেন। হযরত বেরেলভী (র.) প্রত্যক্ষ করেন যে, তাঁর সময়ে মানুষের জেহেরী আমল আখলাক অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। শিরিক, বিদআত ও নানা ফেরকার জটিলতায় উপমহাদেশে এক অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজিত ছিল। পার্শ্ববর্তি ধর্মীয়দের অনেক আচার-অনুষ্ঠানই মুসলমানগণ মেনে চলতেন। তিনি জাহেরী আমল তথা জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী আদব আখলাক শিক্ষা দিতেন এবং সাথে সাথে ইলমে বাতিনেরও শিক্ষা দিতেন। যেমতু রাসুলুল্লাহ (সা:) এভাবে জাহেরী ও বাতেনী আমলের তারবিয়ত দিতেন, তাই হযরত বেরেলভী (র.) তাঁর তরিকার নাম রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর নামানুসারে তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়া নামকরণ করেন।এক প্রশ্নের জবাবে হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ বলেন, তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়া সম্পর্কে হযরত সাইয়্যেদ আহমদ (র.) কে প্রশ্ন করলে, তিনি যে উত্তর দেন সে উত্তর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তাসাউফের প্রত্যেক তরিকতের উদ্দেশ্য ছিল জাহেরী শরিয়তের মাফিক নিজের অন্তরক রিয়াজত-মেহনত এবং ধ্যন দ্বারা সংশোধন করা। সাইয়্যেদ আহমদ (র.) যখন জিহাদের প্রস্তুতি নেন, তিনি প্রত্যক্ষ করেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগে যেভাবে কুফরী স্থানের মধ্যে ইসলামকে বিস্তার করা দরকার ছিল সেভাবে ভারতের অদ্ধকার ভূমিতে ইসলামের পুণর্জাগরণের ব্যবস্থ জিহাদ দ্বারা করতে হবে।কাজেই তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়া তাঁর তরিকার নাম রাখেন। তাঁর কাছে তরিকার শোগল সম্পর্কে জাজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তর দেন, এ তরিকার শোগল হবে (আয়াত শরীফের অনুবাদ) -'আপনি বলুন, আমার সালাত আমার কোরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের উদ্দেশ্যে।' অর্থাৎ একজন মুসলমান তাঁর জীবনের প্রত্যেক মুহুর্তের কাজ আল্লাহর গোলামীর উদ্দেশ্যে করতে থাকবে এবং 'আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি, শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি (আল-কুরআন)-তা' তার জীবনের সব কাজে বাস্তবায়িত করতে থাকবে। অর্থাৎ তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়ার দ্বারা একজন লোক নিজকে নিজে খালিছভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের মতের উপর বিলীন করে দিবে। এ উদ্দেশ্য জেনে ভারতের সত্য-খাঁটি উলামাগণ ও ধর্মপ্রিয় মুসলমানগণ এ তরিকাকে পছন্দ করেন এবং তরিকাভুক্ত হন, কেউ আপত্তি করতন না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি প্রশ্ন করি যে, সাইয়ি্যদ আহমেদ সাহেবের সময়ের উলামা এবং মুসলমানগণ ও তাঁর পার্শবর্তী যুগের উলামা মুসলমানগণ সাইয়্যিদ আহমদ সাহেব সম্পর্কে ভাল জ্ঞাত ছিলেন, না দেড় দুশ বছর পরের লোক তাঁর সম্পর্কে ভাল জ্ঞাত হন
তরিকায়ে মুহাম্মাদীয়া সম্পর্কে সার কথা হল , হিন্দুস্তানে তখন তিনটি প্রসিদ্ধ তরিকা প্রচলিত ছিল। চিশতিয়া, কাদিরিয়া ও নকশবন্দিয়া। তাছাড়া নকশবন্দিয়া তরিকার একটি শাখাকে মুজদ্দিদে আলফে সানীর (রঃ) মাধ্যমে প্রাপ্ত বলে মুজাদ্দেদীয়া বলা হত। সৈয়দ আহমদ শহীদ ভেরেলভী (রঃ) উল্লিখিত তরিকাসমুহ ছাড়া মুহাম্মদি তরিকার ও বয়াত নিতেন এই সফরে রামপুরে অবস্তান কালে সৈয়দ আহমদ (র) কে তরিকায়ে মুহাম্মদিয়া সর্ম্পকে প্রশ্ন করা হয় । তিনি উত্তরে বলেন তরিকায়ে মুহাম্মদিয়া তাৎপর্য এইঃ প্রত্যেক মানুষের প্রতিটি কাজ যেন একমাত্র আল্লাহর সন্তূষ্টি লাভের জন্য হয় । যেমন পাপ থেকে বিরত থাকার জন্যবিবাহ করা শরীয়ত সিদ্ধ নিয়মে অন্ন সংস্তানের জন্য বৈধ সম্পদ সংগ্রহ করে। নিজকে ও পরিবার বর্গকে পরমুখাপেক্ষী হইতে না দেওয়া । রাতের শেষদিকে তাহাজ্জুদ নামায ও এবাদত করার উদ্দেশ্যে প্রথম দিকে নিদ্রা যাওয়া। এভাবে জীবনের প্রতিটি কাজে একমাত্র খোদার সন্তূষ্টি লাভকেই মূল উদ্দেশ্য মনে করা কে তরিকায়ে মুহাম্মদিয়া সার। অথার্ৎ চার তরিকা মুতাবিক যিকর, ফীকর, মুরাকাবা করার সাথে সাথে জীবনের সকল কর্ম। হযরাত মুহাম্মাদ মুসতাফা সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরিকা মুতাবিক খালিছ আল্লাহ তালা’র সন্তূষ্টি লাভের উদ্দেশে্য সম্পন্ন করার উপর প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করাই তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়ার মূল উদ্দেশ্য। সুতরাং বলা য্য় তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়া' শহীদে বালাকোট হযরত সায়্যেদ আহমাদ বেরেলভী রহঃ প্রতিষ্ঠিত এক আধ্যাত্মিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শিক আন্দোলনের নাম। সেই সময়কার উপমহাদেশের ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে আওলাদে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম ইমামুত্ তরিকত, আমীরুল মু'মিনীন হযরত সায়্যেদ আহমাদ শহীদ বেরেলভী (রহঃ) পরিচালিত সংস্কার ও আযাদী আন্দোলন তিনি ছিলেন যামানার মুজাদ্দিদ তথা যুগস্রষ্টা সংস্কারক। হানাফী মাযহাবলন্বী সুন্নী আক্বিদার এই শুদ্ধপন্থী বুজুর্গ ইমামুত তরিক্বত হিসাবে ''তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়া'' নামক যে মৌলিক তরিকার সূচনা করেছিলেন, তা ছিল ইমামুল হিন্দ হযরত শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দীসে দেহলভী রহঃ এর সংস্কারকর্মসূচীর বাস্তব প্রয়োগ। বিদেশী ও বিজাতীয় আধিপত্য, কুপ্রথা ও কুংস্কারের বিরুদ্ধে উপমহাদেশের মসলমানদের পুন;জাগরিত করে আজাদী আন্দোলনের পরিশীলিত গতিধারায় উদ্ধুদ্ধ করার মাধ্যমে তিনি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম সিপাহসালারের ভুমিকা পালন করেছেন। আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক সুবিস্তৃত অধ্যায় জুড়ে আছে এই যুগস্রষ্টা চিন্তানায়কের নাম।

Rahbaar Saheb Qiblah Fultali RA

Labbaik Labbaik Bulbul

Ki Hobe Ki Hobe Bulbul

Ja kunike Samne Urdu Gojol

bolo modina modina urdu

Bolo Ei Desh Kader Bulbul

Bangla Waj

Bahirer Sundor Sundor Noy Bulbul

বালাগাল্লুলা বিকা মালেহি , কাশাফাদ্দুজা বিজা মালেহি By Muhib Khan

5th Isale Sawab Mahfil Fultoli Saheb Bari, 2012

Allahu Heart Touching Nasheed

Friday 3 June 2016

Mawla Ya Salli Wa Sallim

Mawla Ya Salli Wa Sallim

Mowla Iya

Nate Rasule Pak Bulbul

Ogo Olie Kamil Bulbul

Oi Balakut Gorje re Bulbul

Mawla Ya Salli Wa Sallim

Mawla Ya Salli Wa Sallim

Bari Bari Vabi Bangla Nat

Amar Allah Mohan Bulbul

Allama Husam Uddin Saheb Waj

Allama Fultoli Saheb Kiblah Waj

Mufti Giyasuddin Saheb, Isale Sowab Fultoli 2012 144p

Allama Habibur Rahman Saheb, Tafsir Biyani Bazar 2010 144p

Wednesday 1 June 2016

রাসুল (সাঃ)-এর চরিত্র ও গুনাবলী

যে ব্যক্তি খুবই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রাসুল (সাঃ) এর দিকে তাকাবে সে দেখতে পাবে তার চরিত্র ছিল অত্যন্ত উন্নতমানের। কোন মানুষ তার সমকক্ষ হওয়া তো দুরের কথা তার কোন একটি গুণাবলীর সমানও হতে পারবে না। তাকে যিনি শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছেন তিনি হলেন মহান প্রভু আল্লাহ্ তায়ালা।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন:
ْﻰِﻨَﺑَّﺩَﺃ ْﻰِّﺑَﺭ َﻦَﺴْﺣَﺄَﻓ ْﻰِﺒْﻳِﺩْﺄَﺗ
অর্থাৎ, আমার রব আমাকে সর্বোত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছেন।(আল ফাওয়ায়েদুল জালিয়্যাহঃ ১/১০১; হাদীসটির অর্থ সহীহ; দেখুন- আত তাজকেরাহ ফিল আহাদিসিল মুশতাহারাহঃ ১/১৬০, কাশফুল খিফাঃ ১/৮১, ১/৭০, আসনাল মাত্বালিবঃ১/৩৫; আবুল ফাজল বিন নাসির এটাকে সহীহ বলেছেন, আদ দুরারুল মুনতাসিরাহ ফিল আহাদিসিল মুশতাহারাহঃ১/৪৫)
আল্লাহ্ তায়ালা এ সম্বন্ধে বলেন:
َﻚَّﻧِﺇَﻭ ﻰَﻠَﻌَﻟ ٍﻢﻴِﻈَﻋ ٍﻖُﻠُﺧ ( 4 )
অর্থাৎ, আর নিশ্চয় আপনি সুমহান চরিত্রের অধিকারী। (সুরা আল ক্বালামঃ ৪) কেন তিনি এ রকম হবেন না অথচ, তিনি মহান আল্লাহ্ তায়ালার আশ্রয়ে দেখাশোনার মধ্যে ছিলেন।
আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন:
ﺎَﻨِﻨُﻴْﻋَﺄِﺑ َﻚَّﻧِﺈَﻓ
অর্থাৎ, আর আপনি আমার চোখে চোখেই আছেন। (সুরা তুরঃ ৪৮)
অপরদিকে তিনি মুসা (আঃ) সম্বন্ধে বলেছেন:
َﻊَﻨْﺼُﺘِﻟَﻭ ﻰَﻠَﻋ ﻲِﻨْﻴَﻋ
অর্থাৎ, আর [আমি চাই] তুমি যেন আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হও। (সুরা ত্বাহা: ৩৯)
“চোখের সামনে রাখতে চাওয়া’ এবং “চোখে চোখে রাখা” এ দুইয়ের মধ্যে কতই না পার্থক্য!!!! এখান থেকেই তার সুমহান চরিত্রের বর্ণনা স্পষ্ট হয়ে যায়। পৃথিবীর অনেক বড় মনীষীর ভিতরে তার সমপরিমাণ একটা গুণ পাওয়া যদি খুবই দুর্লভ হয়, তাহলে তার সবগুলো গুণাবলী তাদের মাঝে কিভাবে পাওয়া সম্ভব হবে???
রাসুল (সাঃ) এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যঃ
১। ধৈর্যঃ নিজেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সর্বদা আল্লাহ্ তায়ালার আনুগত্যের উপর অটল রাখা, অবাধ্যতার নিকটবর্তী না হওয়া, তার সিদ্ধান্তের কারণে হা হুতাশ না করা এবং তাতে রাগান্বিত না হওয়ার নামই ধৈর্য।
রাসুল (সাঃ) ইসলামের দাওয়াতকে ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করতে গিয়ে কুরাইশদের কাছ থেকে অমানুষিকভাবে অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়ে ধৈর্যধারণ করেছেন। তিনি ধৈর্যধারণ করেছেন দুঃখের বছর, যুদ্ধক্ষেত্র, ইহুদীদের ষড়যন্ত্র, ক্ষুধা ও অন্যান্য পরিস্থিতিতে। কোন ষড়যন্ত্রই তাকে দুর্বল করতে পারেনি এবং কোন পক্ষই তাকে টলাতে পারেনি।
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি রাসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন:
ْﻞَﻫ ﻰَﺗَﺃ َﻚْﻴَﻠَﻋ ٌﻡْﻮَﻳ َّﺪَﺷَﺃ َﻥﺎَﻛ ْﻦِﻣ ِﻡْﻮَﻳ ،ٍﺪُﺣُﺃ :َﻝﺎَﻗ ” ْﺪَﻘَﻟ ُﺖﻴِﻘَﻟ ْﻦِﻣ ِﻚِﻣْﻮَﻗ ﺎَﻣ ،ُﺖﻴِﻘَﻟ َﻥﺎَﻛَﻭ ﺎَﻣ َّﺪَﺷَﺃ ُﺖﻴِﻘَﻟ ْﻢُﻬْﻨِﻣ َﻡْﻮَﻳ ْﺫِﺇ ،ِﺔَﺒَﻘَﻌﻟﺍ ُﺖْﺿَﺮَﻋ ﻲِﺴْﻔَﻧ ﻰَﻠَﻋ ِﻦْﺑﺍ ِﺪْﺒَﻋ َﻞﻴِﻟﺎَﻳ ِﻦْﺑ ِﺪْﺒَﻋ ْﻢَﻠَﻓ ،ٍﻝَﻼُﻛ ﻰَﻟِﺇ ﻲِﻨْﺒِﺠُﻳ ﺎَﻣ ،ُﺕْﺩَﺭَﺃ ُﺖْﻘَﻠَﻄْﻧﺎَﻓ ٌﻡﻮُﻤْﻬَﻣ ﺎَﻧَﺃَﻭ ﻰَﻠَﻋ ْﻢَﻠَﻓ ،ﻲِﻬْﺟَﻭ ﺎَّﻟِﺇ ْﻖِﻔَﺘْﺳَﺃ ﺎَﻧَﺃَﻭ ِﻥْﺮَﻘِﺑ ِﺐِﻟﺎَﻌَّﺜﻟﺍ ُﺖْﻌَﻓَﺮَﻓ ،ﻲِﺳْﺃَﺭ ﺎَﻧَﺃ ﺍَﺫِﺈَﻓ ٍﺔَﺑﺎَﺤَﺴِﺑ ْﺪَﻗ ،ﻲِﻨْﺘَّﻠَﻇَﺃ ُﺕْﺮَﻈَﻨَﻓ ﺍَﺫِﺈَﻓ ﺎَﻬﻴِﻓ ،ُﻞﻳِﺮْﺒِﺟ ﻲِﻧﺍَﺩﺎَﻨَﻓ :َﻝﺎَﻘَﻓ َّﻥِﺇ َﻪَّﻠﻟﺍ ْﺪَﻗ َﻝْﻮَﻗ َﻊِﻤَﺳ َﻚِﻣْﻮَﻗ ،َﻚَﻟ ﺎَﻣَﻭ ﺍﻭُّﺩَﺭ ،َﻚْﻴَﻠَﻋ ْﺪَﻗَﻭ َﺚَﻌَﺑ َﻚَﻠَﻣ َﻚْﻴَﻟِﺇ ُﻩَﺮُﻣْﺄَﺘِﻟ ِﻝﺎَﺒِﺠﻟﺍ ﺎَﻤِﺑ َﺖْﺌِﺷ ،ْﻢِﻬﻴِﻓ ُﻚَﻠَﻣ ﻲِﻧﺍَﺩﺎَﻨَﻓ َﻢَّﻠَﺴَﻓ ِﻝﺎَﺒِﺠﻟﺍ َّﻢُﺛ ،َّﻲَﻠَﻋ :َﻝﺎَﻗ ﺎَﻳ ،ُﺪَّﻤَﺤُﻣ ،َﻝﺎَﻘَﻓ ﺎَﻤﻴِﻓ َﻚِﻟَﺫ ْﻥِﺇ ،َﺖْﺌِﺷ َﺖْﺌِﺷ ْﻥَﺃ َﻖِﺒْﻃُﺃ ُﻢِﻬْﻴَﻠَﻋ ؟ِﻦْﻴَﺒَﺸْﺧَﻷﺍ َﻝﺎَﻘَﻓ ُّﻲِﺒَّﻨﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ُﻪﻠﻟﺍ :َﻢَّﻠَﺳَﻭ ْﻞَﺑ ﻮُﺟْﺭَﺃ ْﻥَﺃ َﺝِﺮْﺨُﻳ ُﻪَّﻠﻟﺍ ْﻦِﻣ ْﻢِﻬِﺑَﻼْﺻَﺃ ْﻦَﻣ ُﺪُﺒْﻌَﻳ َﻪَّﻠﻟﺍ ،ُﻩَﺪْﺣَﻭ َﻻ ِﻪِﺑ ُﻙِﺮْﺸُﻳ ﺎًﺌْﻴَﺷ “
অর্থাৎ,আপনার কাছে কি এমন কোন দিন এসেছে যা উহুদের চেয়েও কঠিন দিন ছিল? রাসুল (সাঃ)বলেন:আমি তোমার কওম থেকে এমন অবস্থার সম্মুখীন হয়েছি যা বর্ণনাতীত।আর আকাবার দিন(তায়েফের ঘটনা)ছিল তাদের পক্ষ থেকে সবচেয়ে কঠিন অবস্থা!!আমি নিজেকে সমর্পণ করলাম ইবনে আবদি ইয়ালিল ইবনে আব্দি কুলাল গোত্রের কাছে;কিন্তু,তারা আমার ইচ্ছায় সাড়া দিল না।অতঃপর আমি চেহারায় দুঃখের ছাপ নিয়ে ফিরে আসছিলাম।আমি যখন সম্বিত দিরে পেলাম তখন আমি ছিলাম-”ক্বারনে ছা’য়ালেব” নামক স্থানে।আমি মাথা উপরের দিকে তুললাম।দেখলাম একখন্ড মেঘ আমাকে ছায়া দিয়েছে।সেখানে জিবরাইল (আঃ)এর সাক্ষাত পেলাম।তিনি আমাকে ডেকে বললেন:আল্লাহ্ তায়ালা কওমের উদ্দেশ্যে আপনার বক্তব্য ও তাদের জবাব শুনেছেন।তিনি আপনার কাছে পাহাড়ের ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন।তাদের ব্যাপারে আপনার যা খুশি তাকে নির্দেশ দেবেন।পাহাড়ের ফেরেশতা আমাকে ডেকে সালাম দিয়ে বললেন,হে মুহাম্মাদ (সাঃ)!!আপনি যা চান তাই হবে।যদি আপনি বলেন তাহলে,আমি তাদের উপর পাহাড় দুটি চাপিয়ে দেব।রাসুল (সাঃ)বললেন:[না!!!]বরং,আমি চাই তাদের ঔরসজাত সন্তানদের মধ্য থেকে এমন কেউ বের হোক যে একমাত্র আল্লাহ্ তায়ালার ইবাদাত করবে তার সাথে কাউকে অংশীদার স্থাপন করবে না।(বুখারী-৩২৩১,মুসলিম-১৭৯৫)
২।ক্ষমা করাঃ ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিশোধ না নেয়ার নামই ক্ষমা।মক্কা বিজয়ের দিনে রাসুল(সাঃ)মক্কার লোকদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করছিলেন।তারা নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের ব্যাপারে তার নির্দেশেরই অপেক্ষা করছিল।তিনি বললেন:হে কুরাইশগণ !!!তোমরা আমার কাছ থেকে আজ কেমন ব্যবহার আশা কর? তারা বলল:সম্মানিত ভাই ও ভ্রাতুষ্পুত্রের মত!!!তিনি বললেন:তোমরা চলে যাও!!!আজ তোমরা মুক্ত!!!তারা তাকে অনেক অত্যাচার-নির্যাতন,তিরস্কার,সামাজিকভাবে বয়কট করা এমনকি হত্যার চেষ্টা করা সত্ত্বেও তিনি তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলেন।
৩।সাহসীকতাঃ কথাবার্তা,মতপ্রকাশ ও কোন কাজ করতে যাওয়ায় সাহসীকতা প্রদর্শন একটা অত্যন্ত চমৎকার গুণাবলী।রাসুল(সাঃ)যুদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ অবস্থায় ছিলেন সকল মানুষের চেয়ে বেশী সাহসী।তার মত সাহসী মানুষ কোন চোখ দেখেনি।বীর সিপাহী হযরত আলী (রাঃ)বলেন:যখন প্রচন্ড যুদ্ধ শুরু হত তখন আমরা রাসুল (সাঃ)কে আড়াল নিয়ে আত্মরক্ষা করতাম।তিনি থাকতেন আমাদের মধ্য থেকে শত্রুদের সবচেয়ে নিকটতম ব্যক্তি। এর অনেক প্রমাণ রয়েছে উহুদ ও হুনায়ন যুদ্ধে। শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি সম্বন্ধে হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন:
ُﻝﻮُﺳَﺭ َﻥﺎَﻛ ِﻪﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻦَﺴْﺣَﺃ َﻢَّﻠَﺳَﻭ ،ِﺱﺎَّﻨﻟﺍ َﻥﺎَﻛَﻭ َﺩَﻮْﺟَﺃ ،ِﺱﺎَّﻨﻟﺍ َﻥﺎَﻛَﻭ َﻊَﺠْﺷَﺃ ِﺱﺎَّﻨﻟﺍ » ْﺪَﻘَﻟَﻭ َﻉِﺰَﻓ ُﻞْﻫَﺃ َﺕﺍَﺫ ِﺔَﻨﻳِﺪَﻤْﻟﺍ ،ٍﺔَﻠْﻴَﻟ ٌﺱﺎَﻧ َﻖَﻠَﻄْﻧﺎَﻓ َﻞَﺒِﻗ ،ِﺕْﻮَّﺼﻟﺍ ُﻝﻮُﺳَﺭ ْﻢُﻫﺎَّﻘَﻠَﺘَﻓ ِﻪﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ ،ﺎًﻌِﺟﺍَﺭ ْﻢُﻬَﻘَﺒَﺳ ْﺪَﻗَﻭ ﻰَﻟِﺇ ،ِﺕْﻮَّﺼﻟﺍ َﻮُﻫَﻭ ﻰَﻠَﻋ ٍﺱَﺮَﻓ ﻲِﺑَﺄِﻟ ﻲِﻓ ،ٍﻱْﺮُﻋ َﺔَﺤْﻠَﻃ ِﻪِﻘُﻨُﻋ ُﻒْﻴَّﺴﻟﺍ َﻮُﻫَﻭ :ُﻝﻮُﻘَﻳ « ْﻢَﻟ ،ﺍﻮُﻋﺍَﺮُﺗ ْﻢَﻟ ﺍﻮُﻋﺍَﺮُﺗ » :َﻝﺎَﻗ « ُﻩﺎَﻧْﺪَﺟَﻭ ،ﺍًﺮْﺤَﺑ ْﻭَﺃ ٌﺮْﺤَﺒَﻟ ُﻪَّﻧِﺇ » :َﻝﺎَﻗ َﻥﺎَﻛَﻭ ﺎًﺳَﺮَﻓ ُﺄَّﻄَﺒُﻳ
” রাসুল (সাঃ) ছিলেন সর্বোত্তম ব্যক্তি, সর্বোচ্চ দানশীল, সবচেয়ে সাহসী। এক রাত্রে একটা শব্দের কারণে মদীনাবাসীরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। লোকেরা শব্দের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। রাসুল (সাঃ) ফিরে আসার পথে তাদের দেখা পেলেন। তিনি তাদের আগেই শব্দের কাছে চলে গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন আবু তালহার ঘোড়ায় এবং তার তার কাধে ঝুলছিল খোলা তরবারী। তিনি তাদেরকে বলছিলেন, অবস্থা শান্ত!! অবস্থা শান্ত!! [ক্ষতিকর কোন কিছুর সম্ভাবনা নেই]। তিনি বলেন: আমরা তাকে পেয়েছি সমুদ্রের মত অথবা তিনি ছিলেন সমুদ্র [সমুদ্রের বেগে এগিয়ে যেতেন]। তিনি বলেন: ঘোড়াটিও ছিল খুবই ধীরগতিসম্পন্ন।(মুসলিম-২৩০৭, ইবনে মাজাহ-২৭৭২, মুসনাদে আহমাদ-১৩৮৬৫, সহীহ ইবনে হিব্বান-৬৩৬৯,বায়হাকীঃ সুনানুল কুবরা-১৮৫৬০)
৪। সহনশীলতাঃ আর তা হল নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা; ব্যক্তির কথা কিংবা কাজ থেকে অপছন্দনীয় কোন কিছু যেন পাওয়া না যায়। এরই নাম সহনশীলতা।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
َّﻥَﺃ ﺎًّﻴِﺑﺍَﺮْﻋَﺃ ﻲِﻓ َﻝﺎَﺑ َﺭﺎَﺜَﻓ ،ِﺪِﺠْﺴَﻤﻟﺍ ُﺱﺎَّﻨﻟﺍ ِﻪْﻴَﻟِﺇ ﺍﻮُﻌَﻘَﻴﻟ ،ِﻪِﺑ َﻝﺎَﻘَﻓ ُﻝﻮُﺳَﺭ ْﻢُﻬَﻟ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ :َﻢَّﻠَﺳَﻭ « ،ُﻩﻮُﻋَﺩ ﻰَﻠَﻋ ﺍﻮُﻘﻳِﺮْﻫَﺃَﻭ ِﻪِﻟْﻮَﺑ ﺎًﺑﻮُﻧَﺫ ْﻦِﻣ ْﻭَﺃ ،ٍﺀﺎَﻣ ﺎًﻠْﺠَﺳ ْﻦِﻣ ،ٍﺀﺎَﻣ ﺎَﻤَّﻧِﺈَﻓ َﻦﻳِﺮِّﺴَﻴُﻣ ْﻢُﺘْﺜِﻌُﺑ ﺍﻮُﺜَﻌْﺒُﺗ ْﻢَﻟَﻭ َﻦﻳِﺮِّﺴَﻌُﻣ »
অর্থাৎ, একজন বেদুঈন মসজিদে পেশাব করেছিল। লোকেরা তার উপরে হামলে পড়ার জন্য ফুসে উঠলে রাসুল (সাঃ) তাদেরকে বললেন, তাকে ছেড়ে দাও!! আর তার পেশাবের উপর বালতি ভর্তি পানি অথবা বালতি দিয়ে পানি ঢেলে দাও। কেননা, তোমরা সহজ করার জন্য প্রেরিত হয়েছো, কঠিন করার জন্য প্রেরিত হওনি। (বুখারী-৬১২৮, সহীহ ইবনে হিব্বান-১৪০০)
অন্য হাদীসে এসেছে-
ْﻦَﻋ ِﻦْﺑ ِﺲَﻧَﺃ ٍﻚِﻟﺎَﻣ :َﻝﺎَﻗ ُﻝﻮُﺳَﺭ َﻥﺎَﻛ ِﻪﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ ﻲِﻓ ﺍًﺪِﻋﺎَﻗ ِﺪِﺠْﺴَﻤْﻟﺍ ْﺫِﺇ ،ُﻪَﻌَﻣ ُﻪُﺑﺎَﺤْﺻَﺃَﻭ َﺀﺎَﺟ ٌّﻲِﺑﺍَﺮْﻋَﺃ ﻲِﻓ َﻝﺎَﺒَﻓ ،ِﺪِﺠْﺴَﻤْﻟﺍ َﻝﺎَﻘَﻓ :ُﻪُﺑﺎَﺤْﺻَﺃ ْﻪَﻣ ،ْﻪَﻣ ُﻝﻮُﺳَﺭ َﻝﺎَﻘَﻓ ِﻪﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ :َﻢَّﻠَﺳَﻭ ” ﺎَﻟ ُﻩﻮُﻣِﺭْﺰُﺗ ُﻩﻮُﻋَﺩ ،“ ُﻩﺎَﻋَﺩ َّﻢُﺛ :ُﻪَﻟ َﻝﺎَﻘَﻓ ” َّﻥِﺇ ِﻩِﺬَﻫ َﺪِﺟﺎَﺴَﻤْﻟﺍ ﺎَﻟ ٍﺀْﻲَﺸِﻟ ُﺢُﻠْﺼَﺗ َﻦِﻣ ِﺭَﺬَﻘْﻟﺍ ِﻝْﻮَﺒْﻟﺍَﻭ ِﺀﺎَﻠَﺨْﻟﺍَﻭ ْﻭَﺃ ،“ ﺎَﻤَﻛ َﻝﺎَﻗ ُﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ُﻪﻠﻟﺍ :َﻢَّﻠَﺳَﻭ ” َﻲِﻫ ﺎَﻤَّﻧِﺇ ِﺓَﺀﺍَﺮِﻘِﻟ ِﻥﺁْﺮُﻘْﻟﺍ ِﺮْﻛِﺫَﻭ ِﺓﺎَﻠَّﺼﻟﺍَﻭ ِﻪﻠﻟﺍ .“ ُﻝﻮُﺳَﺭ َﻝﺎَﻘَﻓ ِﻪﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ُﻪﻠﻟﺍ َﻢَّﻠَﺳَﻭ ٍﻞُﺟَﺮِﻟ :ِﻡْﻮَﻘْﻟﺍ َﻦِﻣ ” ﺎَﻨِﺗْﺄَﻓ ْﻢُﻗ ٍﻮْﻟَﺪِﺑ ْﻦِﻣ ُﻪَّﻨُﺸَﻓ ،ٍﺀﺎَﻣ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ” ُﻩﺎَﺗَﺄَﻓ ٍﻮْﻟَﺪِﺑ ْﻦِﻣ ُﻪَّﻨَﺸَﻓ ٍﺀﺎَﻣ ِﻪْﻴَﻠَﻋ -
অর্থাৎ, হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসুল (সাঃ) একবার সাহাবীদের সাথে মসজিদে বসা ছিলেন। এমন সময় একজন বেদুঈন এসে সেখানে পেশাব করা শুরু করলে সাহাবীরা তাকে ধমক দিয়ে থামতে বললেন। রাসুল (সাঃ) বললেন: তাকে ছেড়ে দাও; বাধা সৃষ্টি করো না [পেশাবে বাধা সৃষ্টি করলে বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে]। তারপর তিনি তাকে ডেকে বললেন: এগুলো মসজিদ; এস্থান অপবিত্রতা কিংবা পেশাব পায়খানার জন্য উপযুক্ত নয়। অথবা তিনি বলেছেন: সেটা কুরআন তেলাওয়াত, আল্লাহর যিকির ও নামাজের স্থান। অতঃপর রাসুল (সাঃ) কওমের একজন লোককে বললেন, তুমি পানি ভর্তি একটা বালতি নিয়ে আসো। এরপর এর উপর ঢেলে দাও। তিনি বালতিতে পানি এনে তার উপর ঢেলে দিলেন। (মুসনাদে আহমাদ- ১২৯৮৪; হাদীসটি সহীহ)
৫।দানশীলতাঃ মুহাম্মাদ(সাঃ)এর দানশীলতা ছিল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী।তিনি নিজের কাছে কিছু থাকলে কাউকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতেন না।তিনি একসময় ইয়েমেনী একসেট পোশাক পরেছিলেন।একজন এসে পোশাকটা চাইলে তিনি বাড়ীতে গিয়ে সেটা খুলে ফেললেন।এরপর সেটা লোকটির কাছে পাঠিয়ে দিলেন।তার কাছে কেউ কিছু চাইলেই তিনি তা দিয়ে দিতেন।একবার একজন লোক তার কাছে এসে ছাগল চাইলে তিনি তাকে প্রচুর পরিমাণ ছাগল দিয়েছিলেন।যা দুই পাহাড়ের মধ্যকার স্থান পূর্ণ করে ফেলবে।এরপর লোকটা নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গিয়ে বলল:হে আমার সম্প্রদায়!!! তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর।আল্লাহর কসম!!মুহাম্মাদ(সাঃ)এত বেশী পরিমাণে দান করেন যে কখনও দারিদ্রতার ভয় করেন না।
মুসলিম শরীফে এসেছে:
ْﻦَﻋ ﻰَﺳﻮُﻣ ،ٍﺲَﻧَﺃ ِﻦْﺑ ْﻦَﻋ ،ِﻪﻴِﺑَﺃ :َﻝﺎَﻗ ” ﺎَﻣ ُﻝﻮُﺳَﺭ َﻞِﺌُﺳ ِﻪﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ُﻪﻠﻟﺍ َﻢَّﻠَﺳَﻭ ﻰَﻠَﻋ ِﻡﺎَﻠْﺳِﺈْﻟﺍ ﺎَّﻟِﺇ ﺎًﺌْﻴَﺷ ،ُﻩﺎَﻄْﻋَﺃ :َﻝﺎَﻗ ٌﻞُﺟَﺭ ُﻩَﺀﺎَﺠَﻓ ُﻩﺎَﻄْﻋَﺄَﻓ ﺎًﻤَﻨَﻏ َﻦْﻴَﺑ ،ِﻦْﻴَﻠَﺒَﺟ ﻰَﻟِﺇ َﻊَﺟَﺮَﻓ ،ِﻪِﻣْﻮَﻗ :َﻝﺎَﻘَﻓ ِﻡْﻮَﻗ ﺎَﻳ ،ﺍﻮُﻤِﻠْﺳَﺃ َّﻥِﺈَﻓ ﺍًﺪَّﻤَﺤُﻣ ﻲِﻄْﻌُﻳ ًﺀﺎَﻄَﻋ ﺎَﻟ ﻰَﺸْﺨَﻳ َﺔَﻗﺎَﻔْﻟﺍ “
অর্থাৎ,হযরত মুসা বিন আনাস (রাঃ)হতে বর্ণিত,তিনি তার পিতার সুত্রে বর্ণনা করেন, রাসুল(সাঃ)এর ক্ষেত্রে কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি যে,কেউ তার কাছে কিছু চেয়েছে অথচ,তিনি তা দেননি।তিনি বলেন:একবার তার কাছে একজন লোক আসলে তিনি তাকে দুই পাহাড়ের মাঝের ছাগল [এত বেশী পরিমাণ ছাগল দিয়ে দিলেন যা দুই পাহাড়ের মধ্যস্থান পরিপূর্ণ করে দেবে]দিয়ে দিলেন।অতঃপর লোকটি নিজের সম্প্রদায়কে বলল:হে আমার সম্প্রদায়!!তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর।কেননা,মুহাম্মদ (সাঃ)এত বেশী পরিমাণে দান করছেন যে তিনি নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার কোন ভয় করেন না।(মুসলিম শরীফ-২৩১২)
হযরত আনাস(রাঃ)বলেন,লোকটি রাসুল(সাঃ)এর কাছে শুধুমাত্র দুনিয়াবী স্বার্থের জন্যই এসেছিল।কিন্তু,সন্ধাবেলা এমন অবস্থার সৃষ্টি হল যে,রাসুল (সাঃ)এর আনীত দ্বীন উক্ত ব্যক্তির কাছে পৃথিবী ও তার মধ্যকার সমস্ত জিনিসের চেয়ে বেশী প্রিয় ও সম্মানিত বলে গণ্য হল।(মুসনাদে আহমাদ-১৪০২৯;হাদীসটি সহীহ)
৬।ন্যায়বিচারঃ রাসুল(সাঃ)এর ন্যায় বিচারের অনেক প্রমাণ রয়েছে।তন্মধ্যে এখানে মাখজুমী গোত্রের একজন মহিলার ঘটনা উল্লেখ করব।চুরির কারণে তার উপর শাস্তিস্বরূপ হাত কাটার বিধান বাস্তবায়ন করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।কেননা,মহিলা ছিল উচ্চ বংশীয় লোক।সাহাবীগণ তার ব্যাপারে সুপারিশ করার জন্য রাসুল(সাঃ)এর কাছে তার অত্যন্ত প্রিয়পাত্র হযরত উসামা(রাঃ)কে পাঠিয়ে দিলেন।
তিনি সুপারিশ করলে রাসুল(সাঃ)তাকে বলেছিলেন:
ﻲِﻓ ُﻊَﻔْﺸَﺗَﺃ ٍّﺪَﺣ ْﻦِﻣ ِﺩﻭُﺪُﺣ ِﻪَّﻠﻟﺍ » َّﻢُﺛ َﻡﺎَﻗ ،َﺐَﻄَﺨَﻓ :َﻝﺎَﻗ « ﺎَﻬُّﻳَﺃ ﺎَﻳ ،ُﺱﺎَّﻨﻟﺍ ﺎَﻤَّﻧِﺇ َّﻞَﺿ ْﻦَﻣ ،ْﻢُﻜَﻠْﺒَﻗ ْﻢُﻬَّﻧَﺃ ﺍﻮُﻧﺎَﻛ ﺍَﺫِﺇ َﻕَﺮَﺳ ،ُﻩﻮُﻛَﺮَﺗ ُﻒﻳِﺮَّﺸﻟﺍ ﺍَﺫِﺇَﻭ َﻕَﺮَﺳ ْﻢِﻬﻴِﻓ ُﻒﻴِﻌَّﻀﻟﺍ ﺍﻮُﻣﺎَﻗَﺃ ُﻢْﻳﺍَﻭ ،َّﺪَﺤﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ،ِﻪَّﻠﻟﺍ َّﻥَﺃ ْﻮَﻟ َﺔَﻤِﻃﺎَﻓ ٍﺪَّﻤَﺤُﻣ َﺖْﻨِﺑ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ،َﻢَّﻠَﺳَﻭ ْﺖَﻗَﺮَﺳ ٌﺪَّﻤَﺤُﻣ َﻊَﻄَﻘَﻟ ﺎَﻫَﺪَﻳ »
অর্থাৎ,তুমি কি আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারিত করে দেয়া শাস্তি সম্বন্ধে সুপারিশ করছো???!!! তারপর তিনি বক্তৃতা করলেন।বক্তৃতায় বললেন:হে মানষেরা!!তোমাদের পুর্ববর্তীরা ধ্বংস হয়ে গেছে।তারা সম্মানী বংশের কেউ চুরি করলে তাদেরকে ছেড়ে দিত এবং দুর্বলেরা চুরি করলে তাদের উপর শাস্তি প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম!!! যদি মুহাম্মাদ (সাঃ)এর মেয়ে ফাতেমাও চুরি করত,তবুও মুহাম্মাদ(সাঃ)তার হাত কেটে দিতেন।(বুখারী-৬৭৮৮,একই অর্থে ৪৩০৪,৩৪৭৫, মুসলিম-১৬৮৮,আবু দাউদ-৪৩৭৩, তিরমীজি-১৪৩০, নাসায়ী-৪৮৯৯,৪৯০২, ইবনে মাজাহ-২৫৪৭, দারেমী-২৩৪৮, সহীহ ইবনে হিব্বান-৪৪০২, বায়হাকীঃ সুনানুস সাগীর-২৬৪৩, বায়হাকীঃ সুনানুল কাবির-১৭১৫৫)
৭।লজ্জাশীলতাঃ হযরত আবু সাইদ খুদরী (রাঃ)বলেন:
َﻥﺎَﻛ ُّﻲِﺒَّﻨﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ُﻪﻠﻟﺍ َّﺪَﺷَﺃ َﻢَّﻠَﺳَﻭ ًﺀﺎَﻴَﺣ َﻦِﻣ ِﺀﺍَﺭْﺬَﻌﻟﺍ ﺍَﺫِﺈَﻓ ،ﺎَﻫِﺭْﺪِﺧ ﻲِﻓ ﻯَﺃَﺭ ﺎًﺌْﻴَﺷ ُﻪُﻫَﺮْﻜَﻳ ﻲِﻓ ُﻩﺎَﻨْﻓَﺮَﻋ ِﻪِﻬْﺟَﻭ»
অর্থাৎ, ঘরের ভিতরে অবস্থানকারিনী কুমারী মেয়ের চেয়েও রাসুল(সাঃ) বেশী লজ্জাশীল ছিলেন। যখন তিনি কোন কিছু দেখে অপছন্দ করতেন তখন তার চেহারা দেখেই আমরা বুঝতে পারতাম। (বুখারী-৬১০২, ৩৫৬২, ৬১১৯, মুসলিম-২৩২০, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা-২৫৩৪৬, মুসনাদে আহমাদ-১১৬৮৩,১১৮৬২, সহীহ ইবনে হিব্বান-৬৩০৮, বায়হাকীঃ সুনানুল কুবরা-২০৭৮৬)
৮। দোষ ঘোষণা না করাঃ হযরত আয়েশা(রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) এর কাছে কোন ব্যক্তির অপছন্দনীয় কোন কাজের সংবাদ আসলে তিনি বলতেন না, অমুকের কি হল যে এমন কথা বলছে? বরং বলতেন: কওমের কি হয়েছে যে, তারা এমন এমন কাজ করে কিংবা এমন এমন কথা বলে? তিনি নিষেধ করতেন কিন্তু, কে দোষের কাজটি করেছে তার নাম নিতেন না। (উয়ুনুল আসারঃ ২/৩৯৯)
৯। দুনিয়া বিমুখীতাঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
َﻡﺎَﻧ ُﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪَّﻠﻟﺍ َﻢَّﻠَﺳَﻭ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ﻰَﻠَﻋ ٍﺮﻴِﺼَﺣ َﻡﺎَﻘَﻓ َﺮَّﺛَﺃ ْﺪَﻗَﻭ ﻲِﻓ ،ِﻪِﺒْﻨَﺟ :ﺎَﻨْﻠُﻘَﻓ َﻝﻮُﺳَﺭ ﺎَﻳ ِﻮَﻟ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﺎَﻧْﺬَﺨَّﺗﺍ َﻚَﻟ ،ًﺀﺎَﻃِﻭ :َﻝﺎَﻘَﻓ « ﺎَﻣ ﻲِﻟ ﺎَﻣ ،ﺎَﻴْﻧُّﺪﻠِﻟَﻭ ﻲِﻓ ﺎَﻧَﺃ ﺎَّﻟِﺇ ﺎَﻴْﻧُّﺪﻟﺍ ٍﺐِﻛﺍَﺮَﻛ َّﻞَﻈَﺘْﺳﺍ َﺖْﺤَﺗ ٍﺓَﺮَﺠَﺷ َّﻢُﺛ َﺡﺍَﺭ ﺎَﻬَﻛَﺮَﺗَﻭ -
অর্থাৎ, রাসুল (সাঃ) নলখাগড়া জাতীয় গাছের পাতা দিয়ে তৈরি করা বিছানায় ঘুমিয়েছিলেন। এতে তার শরীরে দাগ হয়ে গেলে আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)!! আমরা আপনার জন্য ভাল কোন বিছানার ব্যবস্থা করলে ভাল হয়। অতঃপর রাসুল (সাঃ) বললেন: আমার দুনিয়ার প্রতি কোন আকর্ষণ নেই। আমি দুনিয়াতে একজন পথচারী ছাড়া আর কিছুই নই। যে পথচারী একটা গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে একটু পরে সেটা ছেড়ে চলে যায়। (তিরমীজি-২৩৭৭; হাদীসটি সহীহ)
১০। উত্তম সঙ্গঃ হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
َﻝﻮُﺳَﺭ ُﺖْﻣَﺪَﺧ ِﻪﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ُﻪﻠﻟﺍ َﺮْﺸَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ ،َﻦﻴِﻨِﺳ ﺎَﻣ ِﻪﻠﻟﺍَﻭ َﻝﺎَﻗ :ﻲِﻟ ﺎًّﻓُﺃ ،ُّﻂَﻗ ﺎَﻟَﻭ َﻝﺎَﻗ ﻲِﻟ :ٍﺀْﻲَﺸِﻟ َﻢِﻟ َﺖْﻠَﻌَﻓ ؟ﺍَﺬَﻛ ﺎَّﻠَﻫَﻭ َﺖْﻠَﻌَﻓ ؟ﺍَﺬَﻛ
অর্থাৎ, আমি রাসুল (সাঃ) কে দশ বছর সেবা করেছি। আল্লাহর কসম!! তিনি আমাকে কখনও উফ [ধমক বাচক শব্দ] পর্যন্ত বলেননি। আর তিনি আমাকে কোন কাজের জন্য বলেননি কেন এমন করলে এবং এমন কেন করলে না? (মুসলিম-২৩০৯, দারেমী-৬৩, একই অর্থেঃ সহীহ ইবনে হিব্বান-২৮৯৩, ২৮৯৪)
১১। নম্রতাঃ রাসুল (সাঃ) যখন মক্কা বিজয় করে বিজয়ী বেশে মক্কায় প্রবেশ করছিলেন তখন আল্লাহ্ তায়ালার সামনে বিনম্রতায় এতটাই অবনত হয়েছিলেন যে তার দাড়ি তার বাহন উটটির চুটকে স্পর্শ করার উপক্রম হয়েছিল। অথচ, তখন তিনি ছিলেন এমনই এক পরিস্থিতিতে যখন অধিকাংশ রাজা বাদশাহ ও মণীষী স্বভাবতই অহংকার করে থাকে।

মা

মা এমন একটি শব্দ পৃথিবীর সব শব্দের সেরা শব্দ। এমনো মাকে দেখেছি যিনি নিজের অনেক কষ্ট বুকে চেপে রেখে দিন রাত সন্তানের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। নিজের অসুখ, অপারেশনহ হওয়া সত্বেও সন্তানের আরাম আয়েশ, সুখ শান্তি ও খেদমতের জন্য সব ভুলে যান।
এসব মা অভিনয়ে খুব পারদর্শী। তাদের কাছে দুনিয়ার সব অভিনেতা অভিনেত্রী ১০০০ বার ফেল করবে।
দেখা যায় অসুখে তার শরীর খুবই ক্লান্ত তখন কোন সন্তান তার কাছে বলল আম্মু চা দাও বা অন্য কিছু আবদার করল। করতে দেরি হয় মায়ের দিতে দেরি হয়না।
যদি বলা হয় তোমার শরীর কি খারাপ খুব সুন্দর অভিনয় করে বলবে, না তো আমি সুস্থ আছি।
শুধু তার নিজের সন্তান নয় আশেপাশে বা বাসা বাড়িতে তার সন্তানের মত যারা আছে সবার ক্ষেত্রে তিনি সমান আদর ও স্নেহ বিলিয়ে দিচ্ছেন সব সময়। না আছে মুখে কোন বিরক্তি ভাব না আছে কোন ক্লান্তির লেশ মাত্র।
সত্যিকার অর্থে যারা মা, তারা পৃথিবীর সকল সন্তানকে নিজের সন্তানই মনে করেন। তার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ঘটেনি।
এমন মাকে শুধু স্যালুট দিয়ে মায়ের অসম্মান করতে চাইনা।
শুধু দোয়া করি আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও এমন মায়ের হায়াত যেন আল্লাহ বাড়িয়ে দেন এবং এই রহমতের ছায়াকে আমাদের উপর দীর্ঘদিন বাকি রাখেন।
পৃথিবীর প্রত্যেক ঘরে ঘরে এমন মা থাকেন এই প্রত্যাশাই করি মাওলায়ে হাকিকির দরবারে।
(আমিন)