Monday 30 October 2017

আজ ও খুুঁজি তাকে

এফ. কে. জুনেদ আহমদ

এফ কে জুনেদ আহমদ 
হযরত শাহজালাল শাহপরান ও ফুলতলী (রহ.) সহ ৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত আধ্যাত্মিক রাজধানী, খ্যাতপূর্ণ ভূমি সিলেটের জীবন্ত কিংবদন্তী কুরআন তথা দ্বীনের খাদেমদের মধ্যে অন্যতম হলেন অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান কামালী। ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কুরআনের সুমহান বাণী প্রচার করে তিনি বেঁচে আছেন কোটি জনতার মাঝে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে। ক্ষণজন্মা এই মনীষী ছিলেন সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলাধীন আঙ্গারজুর গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বেড়ে উঠা এই মনীষী তার কর্মজীবনের ন্যায় নিষ্ঠা ও সততার সাথে দেশ ও জাতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আনজুুমানে আল ইসলাহ ও লতিফিয়া ক্বারী সোসাইটি গোয়াইনঘাট উপজেলার সভাপতি এবং আঙ্গারজুর আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে গুরু দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও আঙ্গারজুর পূর্ব পাড়া জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লীসহ অন্যান্য দায়িত্বরত অবস্থায় মাওলায়ে হাকীকীর ডাকে সাড়া দেন। হুজুর শুধু ছাত্রদের মাঝে কুরআনের বাণী ছড়িয়ে দিতে কাজ করেননি বরং কাজ করেছেন কুরআনিক সমাজ বিনির্মাণে। আমার শ্রদ্ধেয় ওয়ালিদ মুহতরামের নির্দেশে ২০১১ সালে যখন আমি দাখিল ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই তখন হুজুরের সাথে প্রথম দেখা। মাদরাসায় ভর্তি করার পর হুজুরের নির্দেশে আমার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন তার ফুফাতো ভাই ও বর্তমান মেম্বার জনাব নিজাম উদ্দিন সাহেবের বাড়িতে। হুজুরের বাড়ি মসজিদ সংলগ্ন হওয়ার সুবাদে প্রায়ই হুজুরের সঙ্গে দেখা হত। দেখা হলে জানতে চাইতেন থাকা খাওয়া ও পড়া- লেখার কোন সমস্যা হচ্ছে কি না? বা ব্যক্তিগত কোন অসুবিধা আছে কি না। তখন আমার বয়স কম থাকায় আমি বেশি বুঝতাম না, কিন্তু ধীরে ধীরে যখন আমার বুঝার বয়স হল তখন আমি মনে মনে ভাবতাম হুজুর শুধু তো মাদরাসার অধ্যক্ষ নন বরং তিনি আমার একজন সুযোগ্য অভিভাবকও ছিলেন। আমাকে তাঁর ছেলেদের মত স্নেহ করতেন। আমার সহপাঠীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে জানতে পারলাম যে, সকল ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে তিনি সমান আচরণ করতেন।
হুজুরের শিক্ষা বা কর্মজীবন সম্পর্কে আমার তেমন একটা জানা নেই। পাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জেনেছি যে, হুজুর ছিলেন সদর থানার অন্তর্গত সিরাজুল ইসলাম আলিম মাদরাসার শিক্ষক, আঙ্গারজুর দাখিল মাদরাসার সুপার পদ শুন্য হওয়ার সুবাদে এলাকাবাসীর অনুরোধে সুপার পদে তিনি যোগদান করেন। 
এ মহান ব্যক্তিত্বের প্রচেষ্টায় মাদরাসার দাখিল থেকে আলিম পর্যায়ে উন্নীত হয়। তার এই প্রচেষ্টা স্মরণীয় হয়ে থাকবে মানব হৃদয়ে। 
অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি তার সহকর্মীদের নিকট তিনি পরম শ্রদ্ধেয় ছিলেন। অনেক বৃদ্ধ হুজুরগণ তাকে হুজুর বলে সম্বোধন করতেন। মাদরাসার শিক্ষকবৃন্দ হুজুরের বিয়োগ ব্যথায় আজও ব্যথিত। হুজুরের মৃত্যু দিনে দেখলাম হাজার হাজার মানুষ, ছাত্র-শিক্ষকের কান্নার শুরগোল, যা দ্বারা বুঝা যায় যে, আমরা এক আপনজন কে হারিয়ে ফেলেছি। জনা যায় আগত মুসাল্লিদের অবস্থায় বুঝা গেল অধ্যক্ষ হুজুরের সুন্দর আচরণ থেকে আজ শুধু মাদরাসা নয় গোটা উত্তর সিলেটবাসী সুন্দর আচরণ থেকে বঞ্চিত।
অবুঝ মনে বলতে হয়, 
অবুঝ মনে বুঝ মানে না হুজুর তো আর নাইরে নাই।
মোদের ছেড়ে চলে গেছেন উত্তর সিলেটের হাতেম তায়ী।
কুরআনের এ জীবন্ত খাদেম ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর সোমবার বেলা ১.৪৫ মিনিটের সময় সিলেটবাসীকে কাদিয়ে পরপারে পাড়ি জমান। 
পরিশেষে অশান্ত মনকে শান্তনা দিচ্ছি যে, সবাইকে মুত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। সৃষ্টিকর্তার বিধান অনুযায়ী সবাইকে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। একমাত্র স্বীয় মহিমা ও উজ্জল কর্মই মানুষ মানুষের মাঝে জীবন্ত রাখে। কুরাআনের খাদিম ও কুরআনের আলোকে সমাজ বিনির্মাণে নিবেদিত এই প্রাণ প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আমাদের শিরতাজ, সর্ব শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মাওলানা মুজিবুর রহমান কামালী মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। আল্লাহ তায়ালার দরবারে তার মাগফিরাত কামনা করছি এবং আমাদের মুহতারাম হুজুর কে যেন জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন। আমীন।
লেখক : সাবেক ছাত্র-আঙ্গারজুর আলিম মাদরাসা
বর্তমান শিক্ষার্থীঃ হযরত শহাজালাল দারুচ্ছুন্নাহ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদরাসা,সোবহানীঘাট, সিলেট।