Monday, 30 October 2017

আজ ও খুুঁজি তাকে

এফ. কে. জুনেদ আহমদ

এফ কে জুনেদ আহমদ 
হযরত শাহজালাল শাহপরান ও ফুলতলী (রহ.) সহ ৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত আধ্যাত্মিক রাজধানী, খ্যাতপূর্ণ ভূমি সিলেটের জীবন্ত কিংবদন্তী কুরআন তথা দ্বীনের খাদেমদের মধ্যে অন্যতম হলেন অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান কামালী। ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কুরআনের সুমহান বাণী প্রচার করে তিনি বেঁচে আছেন কোটি জনতার মাঝে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে। ক্ষণজন্মা এই মনীষী ছিলেন সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলাধীন আঙ্গারজুর গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বেড়ে উঠা এই মনীষী তার কর্মজীবনের ন্যায় নিষ্ঠা ও সততার সাথে দেশ ও জাতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আনজুুমানে আল ইসলাহ ও লতিফিয়া ক্বারী সোসাইটি গোয়াইনঘাট উপজেলার সভাপতি এবং আঙ্গারজুর আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে গুরু দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও আঙ্গারজুর পূর্ব পাড়া জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লীসহ অন্যান্য দায়িত্বরত অবস্থায় মাওলায়ে হাকীকীর ডাকে সাড়া দেন। হুজুর শুধু ছাত্রদের মাঝে কুরআনের বাণী ছড়িয়ে দিতে কাজ করেননি বরং কাজ করেছেন কুরআনিক সমাজ বিনির্মাণে। আমার শ্রদ্ধেয় ওয়ালিদ মুহতরামের নির্দেশে ২০১১ সালে যখন আমি দাখিল ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই তখন হুজুরের সাথে প্রথম দেখা। মাদরাসায় ভর্তি করার পর হুজুরের নির্দেশে আমার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন তার ফুফাতো ভাই ও বর্তমান মেম্বার জনাব নিজাম উদ্দিন সাহেবের বাড়িতে। হুজুরের বাড়ি মসজিদ সংলগ্ন হওয়ার সুবাদে প্রায়ই হুজুরের সঙ্গে দেখা হত। দেখা হলে জানতে চাইতেন থাকা খাওয়া ও পড়া- লেখার কোন সমস্যা হচ্ছে কি না? বা ব্যক্তিগত কোন অসুবিধা আছে কি না। তখন আমার বয়স কম থাকায় আমি বেশি বুঝতাম না, কিন্তু ধীরে ধীরে যখন আমার বুঝার বয়স হল তখন আমি মনে মনে ভাবতাম হুজুর শুধু তো মাদরাসার অধ্যক্ষ নন বরং তিনি আমার একজন সুযোগ্য অভিভাবকও ছিলেন। আমাকে তাঁর ছেলেদের মত স্নেহ করতেন। আমার সহপাঠীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে জানতে পারলাম যে, সকল ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে তিনি সমান আচরণ করতেন।
হুজুরের শিক্ষা বা কর্মজীবন সম্পর্কে আমার তেমন একটা জানা নেই। পাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জেনেছি যে, হুজুর ছিলেন সদর থানার অন্তর্গত সিরাজুল ইসলাম আলিম মাদরাসার শিক্ষক, আঙ্গারজুর দাখিল মাদরাসার সুপার পদ শুন্য হওয়ার সুবাদে এলাকাবাসীর অনুরোধে সুপার পদে তিনি যোগদান করেন। 
এ মহান ব্যক্তিত্বের প্রচেষ্টায় মাদরাসার দাখিল থেকে আলিম পর্যায়ে উন্নীত হয়। তার এই প্রচেষ্টা স্মরণীয় হয়ে থাকবে মানব হৃদয়ে। 
অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি তার সহকর্মীদের নিকট তিনি পরম শ্রদ্ধেয় ছিলেন। অনেক বৃদ্ধ হুজুরগণ তাকে হুজুর বলে সম্বোধন করতেন। মাদরাসার শিক্ষকবৃন্দ হুজুরের বিয়োগ ব্যথায় আজও ব্যথিত। হুজুরের মৃত্যু দিনে দেখলাম হাজার হাজার মানুষ, ছাত্র-শিক্ষকের কান্নার শুরগোল, যা দ্বারা বুঝা যায় যে, আমরা এক আপনজন কে হারিয়ে ফেলেছি। জনা যায় আগত মুসাল্লিদের অবস্থায় বুঝা গেল অধ্যক্ষ হুজুরের সুন্দর আচরণ থেকে আজ শুধু মাদরাসা নয় গোটা উত্তর সিলেটবাসী সুন্দর আচরণ থেকে বঞ্চিত।
অবুঝ মনে বলতে হয়, 
অবুঝ মনে বুঝ মানে না হুজুর তো আর নাইরে নাই।
মোদের ছেড়ে চলে গেছেন উত্তর সিলেটের হাতেম তায়ী।
কুরআনের এ জীবন্ত খাদেম ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর সোমবার বেলা ১.৪৫ মিনিটের সময় সিলেটবাসীকে কাদিয়ে পরপারে পাড়ি জমান। 
পরিশেষে অশান্ত মনকে শান্তনা দিচ্ছি যে, সবাইকে মুত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। সৃষ্টিকর্তার বিধান অনুযায়ী সবাইকে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। একমাত্র স্বীয় মহিমা ও উজ্জল কর্মই মানুষ মানুষের মাঝে জীবন্ত রাখে। কুরাআনের খাদিম ও কুরআনের আলোকে সমাজ বিনির্মাণে নিবেদিত এই প্রাণ প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আমাদের শিরতাজ, সর্ব শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মাওলানা মুজিবুর রহমান কামালী মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। আল্লাহ তায়ালার দরবারে তার মাগফিরাত কামনা করছি এবং আমাদের মুহতারাম হুজুর কে যেন জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন। আমীন।
লেখক : সাবেক ছাত্র-আঙ্গারজুর আলিম মাদরাসা
বর্তমান শিক্ষার্থীঃ হযরত শহাজালাল দারুচ্ছুন্নাহ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদরাসা,সোবহানীঘাট, সিলেট।

Saturday, 16 September 2017

মানবিক খাতিরে রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়ান

আলী আহমদ চৌধুরী

জন্ম থেকে আজ অবধি যত ধরণের ঘৃণা প্রকাশ করেছি তার থেকেও কোটি কোটিগুন ঘৃণা প্রকাশ করছি আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে খলফের যোগ্যতম উত্তরাধিকারইয়াহুদিদের একনিষ্ঠ বন্ধু ও খাদিমমুসলিম বিশ্বের যোগ্যতম অপ্রতিদ্বন্দ্বী শত্রু,   বিশ্বের বুকে মুনাফিকদের নেতৃত্বদানকারী একমাত্র দেশ সৌদী কতৃপক্ষের প্রতি।যে ভূখণ্ড থেকে ইসলামের যাত্রা শুরু,যেখান থেকে মানবতার মুক্তির মশাল প্রজ্বলিত হয়েছিলযে পবিত্র জমিনে আরাম করতেছেন বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম   শায়িত আছেন খোলাফায়ে রাশেদা সহ অসংখ্য সাহাবায়ে কিরাম(রা:), যারা একেকজন ছিলেন মানবতার মূর্ত প্রতিক।সে পবিত্র ভূখন্ডে বসবাস করে তাদের আত্মার সাথেবিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ(স:)এর সাথে ও তাঁর অসহায় উম্মতদের সাথে কিভাবে যে গাদ্দারী করে যাচ্ছে তা আজ বিশ্ববাসী অবলোকন করতেছে।আজ যদি সাহাবায়ে কিরামদের কোন একজন দুনিয়ায় থাকতেন তাহলে হয়তো সৌদ সরকারের গাদ্দারদের গর্দান উড়িয়ে দিতেন।কিন্তু সে সময় এখন আর নেই। যে সময়ে দুনিয়ার দিকেদিকে ইয়াহুদি-খ্রিষ্টানেরা মুসলিম মিল্লাতকে ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত,  শুধু ষড়যন্ত্রই নয় রাসূলে মাকবুল (স:) এর প্রাণপ্রিয় উম্মতদের খুন পিপাসায় মত্ত সে সময়ে সৌদ সরকারের অধিকাংশরাই নারী মদ নিয়ে মাতাল ও তাদের মনিব ইয়াহুদীদের খুশি করা নিয়ে মহাব্যস্ত। তাদের কারণেই ফিলিস্তিনের নিরপরাধ মুসলিম ভাই-বোনেরা ও শিশুরা আজ অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার। দয়াল নবীর অসহায় উম্মতেরা  শাহাদাতের কাফেলায় শরীক হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

বার্মার মুসলমানদের উপর বিশ্বের জঘন্যতম অত্যাচার যা আইয়্যামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। আমরা রুশ বিপ্লব দেখেছি, হিটালারের তাণ্ডবলীলা দেখেছি, ব্রিটিশ বেণিয়াদের অত্যাচার নিপীড়ন অবলোকন করেছি। কিন্তু তার চেয়েও জঘন্য ও অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে আমারই ভাই-বোন রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি। যা ইতিহাসের সকল যুলুম নির্যাতনকে হার মানিয়ে বর্বরতার নিকৃষ্টতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে শান্তি নামক অশান্তিতে নোবেলবিজয়ী,  ডাইনী, রাক্ষসী,  মুসলিম তথা মানবখেকো অং সাং সূচী নামক একটি পেত্নীর নেতৃত্বাধীন মায়ানমার সরকার। এমনি মহাসংকটের সময় অসহায় মুসলিমদের পাশে দু'একটি দেশ ব্যতীত মুসলিম বিশ্ব আজ নিরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে।
ধিক শত ধিক OIC সহ আন্তর্জাতিক মুসলিম সংস্থাগুলোর প্রতি যারা এত কিছু অবলোকন করার পরও ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদের পা চেটে যাচ্ছে।
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার কমিশন এরা তো সরাসরি মুসলিম নিধনে সম্পৃক্ত। তাই এদের কথা আর নাই বললাম।
এহেন পরিস্থিতিতে সর্বপ্রথম  মজলুম  মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল এই গাদ্দার মুনাফিক সৌদ সরকারের। কিন্তু অবস্থা ঠিক তার বিপরীত।  ধন্যবাদ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও তাঁর স্ত্রীকে। উম্মতে মুহাম্মদীর এই দুর্দিনে সাথী হওয়ার জন্য। বিশ্বমোড়লদের প্রতি এতটুকু আরজ মুসলিম হিসেবে নয়, অন্তত মানুষ হিসেবে তাদের পাশে দাড়ান। আর মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আবেদন আপনাদের যদি মুসলিমদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসা লজ্জাকর বা মানহানিকর মনে করেন তবে মুসলিম হিসেবে নয়, অসহায় জীব বা অসহায় মানুষ হিসেবে তাদের পাশে দাড়ান, তাদের পক্ষে কথা বলুন। সৌদ সরকারের স্বরণ রাখা উচিত যে, রোহিঙ্গাদের পূর্বসূরিরা একসময়কার সৌদি আরবের অধিবাসী ছিলেন।
রাসূল (স:) যেখানে সকল মুসলিমকে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছেন। সেখানে আজ মুসলিম বিশ্ব নির্বিকার।
সৌদ সরকার ট্রাম্পকে বিরাট অংকের রিয়াল খরচ করে উপহার দিতে পারল কিন্তু অসহায় মুসলিমদের জন্য একটি কানা কড়িও দিতে পারল না। ছিঃ সৌদ গাদ্দাররা! ছিঃ তোমাদের। কিভাবে রাসূলে মকবুল (স:) এর কাছে তার অসহায় উম্মতদের ব্যাপারে জবাব দিবে।
আজ কান পেতে শোন আমার অসহায় ভাই-বোনদের আর্তনাদ। তারা বলছে "আমরা তো মানুষ,  রাসূলে মকবুল (স:) এর প্রাণপ্রিয় উম্মত।  আজ যদি আমাদের কাণ্ডারি দয়াল নবী এই ধরাধামে থাকতেন তাহলে আমাদের এহেন অবস্থা দেখে ঘরে বসে থাকতেন না। কোথায় আবু বকর,উমর, উসমান, আলী আজ তোমাদের বড়ই প্রয়োজন মুসলিম মিল্লাতের।"
যারা মানবতার বুলি আওড়ায় আজ তারা কোথায়?
আমরা যদি এই হত্যাযজ্ঞকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাই যে, এমন কোন ধর্ম নেই যা জীব হত্যা সমর্থন করে। সকল ধর্মেই জীব হত্যা মহাপাপ।
আজ যে সকল বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদেরকে অকাতরে হত্যা করছে তাদের ধর্মে জীব হত্যা সম্পর্কে বলা হয়েছে- 
“ সকলেই দণ্ডকে ভয় করে,জীবন সকলের প্রিয়।সুতরাং নিজের সাথে তুলনা করে কাউকেও প্রহার করবে না কিংবা আঘাত করবে না ”
সূত্রনিপাত গ্রন্থের মৈত্রীসূত্রে এ বিষয়টি বিবৃত হয়েছে এভাবে : ‘সভয় অথবা নির্ভয়, হ্রস্ব অথবা দীর্ঘ, বৃহৎ অথবা মধ্যম, ক্ষুদ্র অথবা স্থূল, দৃশ্য অথবা অদৃশ্য, দূরে অথবা নিকটে যেসব জীব জন্মগ্রহণ করেছে বা জন্মগ্রহণ করবে সেসব প্রাণী সুখী হউক’।
আর ইসলাম ধর্ম কখনো মানব হত্যা তো দূরে থাক সামান্যতম বিশৃঙ্খলাও সমর্থন করে না। পবিত্র কোরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ বলেনঃ-
مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ كَتَبْنَا عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنَّهُ مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا وَلَقَدْ جَاءَتْهُمْ رُسُلُنَا بِالْبَيِّنَاتِ ثُمَّ إِنَّ كَثِيرًا مِنْهُمْ بَعْدَ ذَلِكَ فِي الْأَرْضِ لَمُسْرِفُونَ
অর্থঃ “এ কারণেই আমি বনী ইসরাঈলের প্রতি এ নির্দেশ দিয়েছি যে, যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে হত্যা করলো অন্য প্রাণের বিনিময় ব্যতীত কিংবা তার দ্বারা ভূ-পৃষ্ঠে কোন ফাসাদ বিস্তার ব্যতীত, তবে সে যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করে ফেললো; আর যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে রক্ষা করলো সে যেন সমস্ত মানুষকে রক্ষা করলো” (সুরা মায়িদাহ, আয়াত-৩২)।
সুতরাং যারা ধর্মের অনুশাসন মানেন বা ধর্মাবলম্বী তাদের উচিত এসকল অসহায়দের প্রতি এগিয়ে আসা।
যারা ধর্মে বিশ্বাসী না তাদের জন্য ধর্মের কথা বাদই দিলাম অন্তত  মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। 
এতো অমানবিক  নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ দেখার পরও যারা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে তারা অধার্মিক ও অমানুষ। তারা ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম। আসুন আমরা সবাই অন্তত মানবিক খাতিরেই রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়াই। আমাদের দেশের সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংস্থাগুলোর  প্রতি অনুরোধ দলমত নির্বিশেষে ১৯৭১ সালে ভারতের পাশাপাশি যারা আমাদের সাহায্য করেছিল প্রতিবেশী হিসেবে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসুন। মুসলমান বাদ দেন মানুষ হিসেবে,  প্রতিবেশী হিসেবে, মুক্তিযুদ্ধের সাহায্যকারী হিসেবে অন্ততপক্ষে জীব হিসেবে তাদের পাশে দাড়ান। 

লেখকঃ আলী আহমদ চৌধুরী, অর্থনীতি বিভাগ,এম সি কলেজ, সিলেট।

Saturday, 10 September 2016

তাবলীগ জামাতের মসজিদ ব্যবহার অবৈধ

তাবলীগ জামাতের মসজিদ ব্যবহার অবৈধ
অালী অাহমদ চৌধুরী

................................... অালী অাহমদ চৌধুরী

মসজিদ হচ্ছে সেজদার স্থান, নামাজ, জিকির, তেলাওয়াত, ইতিকাফ প্রভৃতি ইবাদতের স্থান। সুতরাং মসজিদকে এসব ইবাদতের জন্যই নির্দিষ্ট রাখা জরুরী কর্তব্য। আর এজন্য কুরআনুল কারীম, হাদিস শরীফ ও নির্ভরযোগ্য ফতুয়ার কিতাবে নির্দেশ এসেছে। সেসব দলিলের আলোকে ৬ উসুলী তাবলীগ জামাতের কর্মীদের মসজিদে রাত্রিতে অথবা দিনে ঘুমানো তথা মসজিদকে বিশ্রামাগার বানানো অবৈধ কাজ। একটি পার্র্টির দলীয় কর্মসূচী পালনে ব্যস্ত এসব লোকের মসজিদে রাতে বা দিনে আরাম করা, ঘুমানো বা বিশ্রাম করা মোটেও শরিয়ত সম্মত নয়। ইতিকাফের নিয়তে মৌখিক দাবী মসজিদ সমূহকে আবাসিক হোটেল বানানো সম্পূর্ণ অবৈধ কাজ। মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার ব্যাপারে আল্লাহ তা’য়ালার নির্দেশ রয়েছে।
যেমন আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেন,
ﻭَﻃَﻬِّﺮْ ﺑَﻴْﺘِﻲَ ﻟِﻠﻄَّﺎﺋِﻔِﻴﻦَ ﻭَﺍﻟْﻘَﺎﺋِﻤِﻴﻦَ ﻭَﺍﻟﺮُّﻛَّﻊِ ﺍﻟﺴُّﺠُﻮﺩِ
অর্থাৎ “আমার গৃহকে পবিত্র রাখ তওয়াফকারীদের জন্যে, নামাযে দণ্ডায়মানদের জন্যে এবং রুকু সেজদাকারীদের জন্যে (সূরা হজ্জ-২৬)।”
অন্যত্র আরও এরশাদ করেন-
ﻭَﻋَﻬِﺪْﻧَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ﻭَﺇِﺳْﻤَﺎﻋِﻴﻞَ ﺃَﻥْ ﻃَﻬِّﺮَﺍ ﺑَﻴْﺘِﻲَ
ﻟِﻠﻄَّﺎﺋِﻔِﻴﻦَ ﻭَﺍﻟْﻌَﺎﻛِﻔِﻴﻦَ ﻭَﺍﻟﺮُّﻛَّﻊِ ﺍﻟﺴُّﺠُﻮﺩِ
অর্থাৎ “আমি ইবরাহীম ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু সেজদাকারীদের জন্যে পবিত্র রাখ।” (সূরা বাকারা-১২৫)
উপরোক্ত আয়াত শরীফদ্বয়ের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ইবাদতের ঘরকে নামাজ, ইতিকাফ তথা ইবাদতের জন্য পবিত্র রাখতে হবে। কেননা প্রত্যেকটি মসজিদ হলো খানায়ে কাবার প্রতিচ্ছবি। আবাসিক হোটেল বানিয়ে তার পবিত্রতা নষ্ট করা উচিত নয়। তাবলীগ জামাতের লোকেরা বলে থাকে আমরা যখন মসজিদে প্রবেশ করি তখন সুন্নত ইতিকাফের নিয়ত করি। প্রকৃত পক্ষে তাদের নিয়ত কি সুন্নত ইতিকাফের জন্য?
না ৬ উসুলী তাবলীগ প্রচারের জন্য?
আল্লাহ সর্বশক্তিমান, তিনি সব কিছুই জানেন। আল্লাহকে ধোঁকা দেওয়া যাবে না। ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করলে আসর নামাজের পরে বা জোহর নামাজের পরে দাওয়াত দেওয়ার জন্য বের হন কেন?
আবার বাজার করতে যান কেন?
বাড়ীতে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য বাজারে মোবাইল করতে যান কেন?
ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে ঢুকেন, কিন্তু ইতিকাফ বহির্ভূত কাজও করেন, তাহলে এটা কি ইতিকাফ, না আল্লাহকে ধোঁকা দেয়া?
একটা গল্প মনে পড়ে গেল। বাবা ও ছেলে নৌকা চালায়। একদিন নৌকা নিয়ে মাঝ নদীতে আছে। এমন সময় কাল বৈশাখী ঝড় দেখা দিল। বাবা বললো হে আল্লাহ! যদি ঝড় না আসে তাহলে একটি মহিষ দান করবো। সত্যি সত্যিই ঝড় আসলো না। এখন ছেলে বাবাকে ডেকে বলে, বাবা! আমারতো গরীব মানুষ। দিন আনি দিন খাই। মহিষ কেনার টাকা পাব কোথায়? তখন বাবা বললো আরে বোকা! বুঝলি না। আল্লাহ আমাদের ভয় দেখালো আর আমি আল্লাহকে লোভ দেখালাম (নাউযুবিল্লাহ)।
তাবলীগ ওয়ালাদের ইতিকাফ হলো এই রকম অর্থাৎ ধোঁকা। যেহেতু ইতিকাফ ছাড়া মসজিদে অবস্থান করা বা রাত কাটানো যাবে না। তাই মসজিদে প্রবেশের সময় ইতিকাফের নিয়ত করে প্রবেশে করে, কিন্তু প্রবেশ করার পর শুরু হয় ওহাবী চক্রান্ত। আরও একটি কথা হলো, সুন্নত ইতিকাফ কখনও দলবদ্ধভাবে হয় না। কিন্তু তাবলীগিরা দলবদ্ধভাবে ইতিকাফ করছে। অনেক সময় রাতে মসজিদে স্বপ্নদোষ হয়ে যায়, ফলে মসজিদের পবিত্রতাও নষ্ট হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, সাহাবায়ে কেরামগণ ইতিকাফ করতেন নিজের এলাকার মসজিদে। বাড়ী-ঘর রেখে দূর দূরান্তে গিয়ে অন্য এলাকার মসজিদে ইতিকাফ করতেন না। ইলিয়াছি তাবলীগী ভাইয়েরা যে এক জেলা হতে অন্য জেলার মসজিদে ইতিকাফ করতে যান কোন দলিলের প্রেক্ষিতে? নিজের এলাকা বাদ দিয়ে অন্য এলাকার মসজিদে ইতিকাফ করা কি ইসলাম সম্মত? না এটাও ইলিয়াছ মেওয়াতীর স্বপ্নে পাওয়া তাবিজ? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, রোজা ছাড়া ইতিকাফ হয় না। বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ মুয়াত্তা শরীফের কিতাবুল ইতিকাফ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে, “মালেক (র) বলেন তাঁর নিকট খবর পৌঁছিয়াছে যে, কাসিম ইবনে মুহাম্মদ (র) ও আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) এর মাওলা নাফি’ (র) বলিয়াছেনঃ ইতিকাফ জায়েজ নহে রোজা ব্যতিত, কারণ কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
ﻭَﻛُﻠُﻮﺍ ﻭَﺍﺷْﺮَﺑُﻮﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟْﺨَﻴْﻂُ ﺍﻟْﺄَﺑْﻴَﺾُ ﻣِﻦَ
ﺍﻟْﺨَﻴْﻂِ ﺍﻟْﺄَﺳْﻮَﺩِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ ﺛُﻢَّ ﺃَﺗِﻤُّﻮﺍ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ
ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺒَﺎﺷِﺮُﻭﻫُﻦَّ ﻭَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻋَﺎﻛِﻔُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴَﺎﺟِﺪِ
অর্থাৎ ‘আর তোমরা পানাহার কর
যতক্ষণ রাত্রির কৃষ্ণ রেখা হতে উষার শুভ্র রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। অতঃপর নিশাগমন পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় তাদের সাথে সঙ্গত হইও না’ (সূরা বাকারা-১৮৭)।
আল্লাহ তায়ালা ইতকিাফের উল্লেখ করেছেন রোজার সাথে। তাই রোজা ব্যতিত ইতিকাফ হয় না।” (মুয়াত্তা শরীফ, ১ম খন্ড, ইতিকাফ অধ্যায়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
আরও একটি বিষয় হচ্ছে রাসূলে কারীম (সা.) কাঁচা পিয়াজ খেয়ে মসজিদের নিকটে যেতে নিষেধ করেছেন। কেননা কাঁচা পেয়াজে দুর্গন্ধ আছে। তাবলীগ জামাতের লোকেরা মসজিদের পাশেই রান্না করেন এবং সেখানেই পিয়াজ কাঁটে। ফলে এর দুর্গন্ধ দ্বারা অন্য মুসল্লিদের কষ্ট হয়, যা কিনা রাসূল (সা.) এর হুকুমের পরিপন্থী। অনেক তাবলীগ জামাতের লোকদেরকে দেখা যায়, মসজিদের ভেতরে বসে কাঁচা পিয়াজ দিয়ে খিচুরী খাচ্ছে। যেখানে নবীজি কাঁচা খেয়ে মসজিদের নিকটে যেতে নিষেধ করেছেন, সেখানে তারা মসজিদের ভেতরেই কাঁচা পিয়াজ খাচ্ছে। যারা নবীর হাদিসকে অমান্য করে তারা কিভাবে দ্বীনের খেদমত করে তা আমার জ্ঞানে ধরে না।
তাবলীগ জামাতিগণ বুখারী শরীফের দুটি হাদিস দিয়ে মসজিদ ব্যবহার করতে চায়। তাই সে সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করা যাক। বুখারী শরীফে মসজিদে পুরুষদের ঘুমানো নামে একটি পরিচ্ছেদ আছে। তাতে মাত্র দুটি হাদিস শরীফ উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বুখারী শরীফ ১ম খন্ড, কিতাবুস সালাত বা সালাত অধ্যায়ের ২৯৯ নং পরিচ্ছেদ যার নাম ‘বাবু নাউমির রিজালি ফিল মাসজিদ’ অর্থাৎ ‘পুরুষদের মসজিদে ঘুমানো’। ২৯৯ নং পরিচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়, “আবু কিলাবা (র) আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণনা করেনঃ উকল গোত্রের কতিপয় ব্যক্তি নবী (সা.) এর নিকট আসলেন এবং সুফফায় অবস্থান করলেন। আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর (রা.) বলেন, সুফফাবাসিগণ ছিলেন দরিদ্র।” এ কথা বলেই দুটি হাদিস শরীফ পেশ করা হয়। হাদিস শরীফ নং ৪২৭ ও ৪২৮। উল্লেখ্য যে, মসজিদে নববীর বারান্দায় যারা অবস্থান করতেন তাদেরকে আসহাবে সুফফা বা বারান্দার অধিবাসী বলা হত। তারা খুবই গরীব ছিলেন এবং নবীজির পক্ষ থেকে কোন খাদ্য আসলে তা গ্রহণ করতেন। নবীজি এদেরকে মেহমান বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই দলিল দিয়ে তাবলীগী ভাইয়েরা মসজিদ ব্যবহার করতে চায়, যা বোকামী ছাড়া কিছু নয়।
৪২৭ নং হাদিসঃ আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তিনি মসজিদে নববীতে ঘুমাতেন। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। তাঁর কোন পরিবার- পরিজন ছিল না।’ (বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
পাঠকগণ! একটু গভীরভাবে চিন্তা করুন। ২৯৯ নং পরিচ্ছেদে বলা হল সুফফাবাসিগণ ছিলেন দরিদ্র। আর আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) মসজিদে ঘুমাতেন। তাঁর কোন পরিবার-পরিজন ছিল না অর্থাৎ তিনি গরীব ছিলেন।
অতএব উক্ত হাদিস দিয়ে তাবলীগ জামাতিগণ কোনক্রমেই মসজিদে থাকতে পারবে না। কেননা আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) যে প্রেক্ষাপটে মসজিদে থাকতেন তা তাবলীগ জামাতিগণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। উক্ত হাদিস শরীফ হতে বুঝা যায় যে, কোন গরীব মুসাফির যদি কোন স্থানে থাকার জায়গা না পায় তবে সে কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে মসজিদে থাকতে পারে। তাই তাবলগী জামাতীগণ কোনভাবেই উক্ত হাদিস শরীফ দিয়ে মসজিদ ব্যবহার করতে পারে না।
এবার দ্বিতীয় হাদিস অর্থাৎ ৪২৮ নং হাদিস শরীফের দিকে লক্ষ্য করি। ৪২৮ নং হাদিসঃ সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, “ তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সা.) ফাতিমা (রা.) এর ঘরে এলেন, কিন্তু আলী (রা.) কে ঘরে পেলেন না। তিনি ফাতিমা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আমার চাচাত ভাই কোথায়? তিনি বললেনঃ আমার ও তাঁর মধ্যে কিছু ঘটেছে। তিনি আমার সাথে রাগ করে বাইরে চলে গেছেন। আমার কাছে দুপুরের বিশ্রামও করেননি। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে বললেনঃ দেখ তো সে কোথায়? সে ব্যক্তি খুঁজে এসে বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি মসজিদে শুয়ে আছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) এলেন, তখন আলী (রা.) কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন। তাঁর শরীরের এক পাশের চাদর পড়ে গিয়েছে এবং তাঁর শরীরে মাটি লেগেছে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর শরীরের মাটি ঝেড়ে দিতে দিতে বললেনঃ উঠ, হে আবু তুরাব! উঠ, হে আবু তুরাব!” (বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
পাঠকগণ! একটু গভীরভাবে চিন্তা করুন। এখানে নবীজি (সা.) হযরত আলী (রা.) এর মসজিদ শয়ন করাকে পছন্দ করেন নি, তাই তাঁকে উঠ, হে আবু তুরাব! উঠ, হে আবু তুরাব!” বলে মসজিদ থেকে নিয়ে আসলেন। কেননা মসজিদ বিশ্রামের স্থান নয়, বিশ্রামের স্থান হলো বাড়ী। আর হযরত আলী (রা.) বাড়ী আছে, তিনি মসজিদে কেন ঘুমাবেন? তাই নবীজি (সা.) তাঁর মসজিদে ঘুমানো পছন্দ করলেন না বলে তাকে মসজিদ থেকে নিয়ে আসলেন। অতএব এ হাদীস দিয়েও তাবলীগ জামাতীগণ মসজিদকে থাকার হোটেল বানাতে পারবে না।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আকরাম (রা.) হতে বর্ণিত হুযুর আকরাম (সা.) এরশাদ করেন, “তোমরা মসজিদকে ঘুমাবার স্থান বানাইও না।” (উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, ৫ম খন্ড, ৪৪৬ পৃষ্ঠা)।
যেখানে মসজিদে ঘুমানো স্পষ্ট নিষেধ রয়েছে, সেখানে অন্যান্য হাদিসগুলির মর্মার্থ এবং প্রেক্ষাপট অবশ্যই বিশ্লেষণ করতে হবে। বিশ্লেষণ না করে যেন-তেনভাবে মসজিদ ব্যবহার করা যাবে না। কেননা ইসলামের ইতিহাসে এমন কোন প্রমান নেই যে, সাহাবায়ে কেরাম ইসলামের দাওয়াত নিয়ে কোন মসজিদে অবস্থান করেছেন।
হুজুর পাক (সা.) বিভিন্ন রাষ্ট্রে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন চিঠির মাধ্যমে এবং সরাসরি রাষ্ট্র প্রধানের নিকট। সেখানে সাহাবায়ে কেরাম নবীজির চিঠি নিয়ে সরাসরি রাষ্ট্র প্রধানের নিকট গেছেন, কোন মসজিদ বা ধর্ম উপাসনালয়ে অবস্থান করেননি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস এর নিকট নবীজি (সা.) ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন চিঠির মাধ্যমে। অতএব তাবলীগ জামাতের মসজিদ দখল কুরআন হাদিস বিরোধী। যদি কেহ হাদিস দিয়ে মসজিদ দখল প্রমাণ করতে চায়, তবে তা হবে হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা। মানুষ যখন কোন বিপদে পড়ে, তখন সে বিপদ থেকে বাঁচার জন্য কোন উপায় খুঁজতে থাকে। সেরূপভাবে তাবলীগ জামাতিগণ মসজিদ দখলের জন্য বিভিন্ন হাদিসের ভূল ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। হাদীস শরীফ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, দরিদ্র ও সামর্থ্যহীন মুসাফির মসজিদে রাতে কিছু সময় বা কয়েকদিন থেকেছেন। কেননা নবীজির যুগে আবাসিক হোটেল ছিল না। বর্তমানে অনেক আবাসিক হোটেল আছে। তাই মসজিদকে আবাসিক হোটেল না বানানোই শ্রেয়। হাদীস শরীফ হতে জানা যায় যে, সাহাবীগণ যদি কোন কারণবশতঃ মসজিদে ঘুমাতেন তবে মসজিদে নববী ব্যতিত অন্য কোন মসজিদে তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে ফতোয়া আলমগীরীতে উল্লেখ আছে, “মসজিদে না ঘুমানই উত্তম।” নবীজি (সা.) তিন মসজিদ ব্যতিরেকে অন্য কোন মসজিদে সফর করতে নিষেধ করেছেন। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলে কারীম (সা.) এরশাদ করেন,
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻻ ﺗﺸﺪ ﺍﻟﺮﺣﺎﻝ ﺇﻻ ﺇﻟﻰ ﺛﻼﺛﺔ ﻣﺴﺎﺟﺪ
ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ ﻭﻣﺴﺠﺪ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ
ﺳﻠﻢ ﻭﻣﺴﺠﺪ ﺍﻷﻗﺼﻰ
অর্থাৎ ‘তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে সফর করা যাবে না। মসজিদে হারাম (মক্কা), আমার মসজিদ (মসজিদে নববী) এবং মসজিদে আল আকসা (বায়তুল মুকাদ্দাস)” (সূত্রঃ বুখারী শরীফ, হাদিস নং-১১২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মুসলিম শরীফ, হাদিস নং-৩৪৫০)।
এ বক্তব্যটির অনুকূলে মুসনাদে আহমদে নিম্নোক্ত বর্ণনাটি সমর্থন হিসেবে পাওয়া যায়।
ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻻ ﻳﻨﺒﻐﻲ
ﻟﻠﻤﻄﻲ ﺃﻥ ﺗﺸﺪ ﺭﺣﺎﻟﻪ ﺇﻟﻰ ﻣﺴﺠﺪ ﻳﺒﺘﻐﻰ ﻓﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ
ﻏﻴﺮ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ ﻭﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﺍﻷﻗﺼﻰ ﻭﻣﺴﺠﺪﻱ ﻫﺬﺍ
অর্থাৎ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, “মসজিদে হারাম, মসজিদে আকসা ও মসজিদে নববী ব্যতিত অন্য কোন মসজিদে নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে সফর করা কোন মুসাফিরের জন্য সঙ্গত নয়। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১১৬০৯)
কিন্তু তাবলীগী ভাইয়েরা নবীজির হাদিসকে অমান্য করে বিভিন্ন মসজিদে সফর করে বেড়ায়, যা ইসলামের পরিপন্থী।
এ ব্যাপারে মসজিদ কমিটিকে সচেতন হতে হবে, যেন ইলিয়াছি বাহিনী মসজিদ ব্যবহার ও মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট করতে না পারে। অবশ্য কিছু কিছু সচেতন মসজিদ কমাটি আছে,যারা ঐবাতিলদেরকে মসজিদে প্রবেশ করতে দেয়না।

Wednesday, 7 September 2016

কবিতা

বীরের জাতি
অালী অাহমদ চৌধুরী

আল্লাহ পাকের বান্দা
মোরা রাসূল পাকের উম্মত।
শাহজালালের উত্তরসূরী
বুকে আছে হিম্মত।

ফুলতলীর সৈন্য মোরা
মোরা কখনও থামবনা।
নাস্তিক তোরা যতই লাফাও
আমরা তোদের ছাড়ব না।

রক্ত মোদের বীর খালিদের
উমর আলী উসমানের।
হঠিয়েছি নাস্তিক মুরতাদ
শত্রু যত ইসলামের।

অতীত ফিরে চাওরে তোরা
দেখ তোদের হাল।
ইসলাম নামটি মুছে
দিতে বুনেছিল যারা জাল।

হাক দিয়েছি জাল ছিড়েছি
শায়েস্তা করেছি ওদের।
তোরা হলে পিপড়ে মাছি
সেই তুলনায় তাদের।

বদর নামক কুপের তীরে
তোমরা ছিলে হাজার।
আমরা ছিলাম তিনশ তের
বিজয় হয়েছিল কার ?

উতবা শায়বা আবু জেহেল
শক্তি ছিল কত।
তাদের সাথে হাত মিলাল
উবাই আরো যত।

সবাই মিলে চেয়েছিল
ইসলাম নামের ক্ষয়।
কতল করেছি বন্দি করেছি
হয়েছিল মোদের জয়।